পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মুকুটরায়

 মুকুটরায়ের পালাটিও মৈমনসিং হইতে সংগৃহীত। ইহাকে ঠিক পালাগান বলা যায় না। ইহা গীতি কথার লক্ষণাক্রান্ত। গীতিকথা ও পালাগানে কতকটা গুরুতর পার্থক্য আছে। গীতিকথার অনেক অংশ গদ্যে রচিত এবং তাহার মধ্যে মধ্যে কথকেরা পয়ার গাহিয়া যায়। সুতরাং গীতিকথার অর্দ্ধেক গদ্য এবং অর্দ্ধেক পদ্য। সময়ে সময়ে পদ্যের ভাগ বেশী থাকে। কিন্তু পালাগানের অনেকগুলিই সমস্তই পদ্যে লেখা। দ্বিতীয়তঃ গীতিকথায় অনেক আজগুবি বিষয়ের অবতারণা আছে। বিশেষতঃ তান্ত্রিকদিগের মন্ত্রতন্ত্রের অসাধারণ গুণে নানারূপ অলৌকিক ঘটনার সংঘটন গীতিকথার একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য। যাঁহারা দক্ষিণারঞ্জন বাবুর ঠাকুর দাদার ঝুলির মালঞ্চ মালা ও কাঞ্চন মালা এই দুইটি গীতিকথা পড়িয়াছেন তাঁহারা এই বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে অভিজ্ঞ। আমাদের সংগৃহীত এই পালাগানগুলির মধ্যেও কতকগুলি গীতিকথা আছে। যথা ‘কাজল রেখা’, ‘কাঞ্চন মালা’, ‘ভারৈ রাজা’, প্রভৃতি। এই মুকুটরায়ের পালায় তন্ত্রমন্ত্রের প্রভাবে অসাধ্য সাধনের অনেক কথা আছে। যে আকারে মুকুটরায়ের পালাটি প্রথম বিরচিত হইয়াছিল সে আকারটি পাইবার উপায় নাই। ইহার প্রথমভাগ ঠিক রাখিয়া মুসলমান লেখক একটা হিন্দুকাহিনীকে শেষভাগে রূপান্তরিত করিয়া ফেলিয়াছেন। ইহাতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কোন চিহ্ন নাই, কিন্তু মুসলমান ধর্ম্মের মহিমা ঘোষণা করার চেষ্টা আছে। সম্ভবতঃ এই গীতিকথাটির দ্বিতীয় লেখক এইরূপ আরো তিন চারটি গীতিকথা রচনা করিয়াছিলেন। তাহাদের প্রত্যেকটিতে একটি হিন্দুকাহিনীর অবতারণা হইয়া শেষে তাহাতে ইসলামের জয় প্রচারিত হইয়াছিল। এই গীতিকথাটির শেষের ছত্রটি হইতে আমরা এই অনুমান করিয়াছি।

 প্রথমতঃ রাজকুমার যখন নির্জ্জন গভীর অরণ্য-প্রদেশে তাঁহার প্রেমিকাকে দেখিতে পান সে এক অপূর্ব দৃশ্য। আমরা একাকী মিরাণ্ডাকে সামুদ্রিক