পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভারাইয়া রাজার কাহিনী
৫০৯

ও শোচনীয় অবস্থা দর্শনে প্রজামণ্ডলীর নয়নে অশ্রুর বাণ ছুটিল। কিন্তু বীরসিংহ অতি কঠোর ভাবে তাঁহার সমস্ত আবেদন প্রত্যাখ্যান করিলেন। রাজমহিষী নিজের জন্য কোন প্রার্থনাই করেন নাই। তিনি ধর্ম্ম সাক্ষী করিয়া রাজাকে তাঁহার কন্যার সহিত কুমারের বিবাহের প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করাইয়া দিয়াছিলেন; এই কাতর নিবেদন উচ্চারণ করিতে যাইয়া তাঁহার কণ্ঠস্বর কতবার গদ্‌গদ হইয়াছিল,―তাঁহার ভাষা কতবার কাঁপিয়া গিয়াছিল এবং তিনি কত না মর্ম্মন্তুদ বেদনা অনুভব করিতেছিলেন! কিন্তু ক্ষত্রিয়পুঙ্গব বীরসিংহ সেই রাণীকে যে কদর্য্য ভাষায় গালাগালি দিয়াছিলেন, তাহাতে উচ্চশ্রেণীর হিন্দুরা নিম্ন শ্রেণীর লোকের উপর কিরূপ বিদ্বিষ্ট ও ঘৃণার ভাব পোষণ করেন, তাহা জাজ্বল্যমান। রাণী বিষ খাইয়া প্রাণত্যাগ করিলেন। রাজকন্যাও উদ্দেশে স্বামীর পদে শত শত মিনতি জানাইয়া ও ভালবাসার কতকগুলি চূড়ান্ত কথা বলিয়া মাতার অনুগামিনী হইলেন। পালা রচয়িতা লিখিয়াছেন কুমারীর এই অবস্থা দর্শনে তাঁহার প্রস্তরীভূত পিতার চক্ষু দিয়া দুই ফোঁটা জল পড়িয়াছিল; পাষাণ যে দুঃখে গলিয়া গিয়াছিল, রক্তমাংসের শরীরে তাহার কোন প্রভাব দেখা গেল না।

 ভারাইয়া-রাজকন্যা অপরাপর পালাগানগুলির প্রথিতকীর্ত্তি মহীয়সী মহিলা চরিত্র-সমূহের পার্শ্বে আসিয়া দাঁড়াইবার যোগ্যা, তিনি সর্ব্ববিধ গুণমণ্ডিতা। কিন্তু নায়কের চরিত্র অতি হীন। ধোপার পাটের কাঞ্চনমালার প্রণয়ী রাজপুত্রের মতই তাহার চরিত্র।

 এই গানটিতে নানা তন্ত্র-মন্ত্রের প্রভাব দেখিয়া মনে হয় ইহা দশমএকাদশ শতাব্দীর প্রভাবান্বিত, কিন্তু গানটি ঠিক কবে রচিত হইয়াছিল তাহা বলা যায় না।

 ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বিজয়নারায়ণ আচার্য্য মহাশয়ের সাহায্যে চন্দ্রকুমার দে এই পালাটি সংগ্রহ করেন। নাজির নামক এক ফকির এই গানের প্রথমাংশ আবৃত্তি করিয়াছিল, পরে ঐ জেলার ফুলপুর নামক গ্রামনিবাসী আর একজন ফকির বাকী অংশের অনেকটা দিয়াছিল। শিমুলকান্দা-নিবাসী ঈশান নামক একব্যক্তির সাহায্য লইয়া চন্দ্রকুমারবাবু