পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চন্দ্রাবতীর রামায়ণ

 বিখ্যাত মহিলা-কবি চন্দ্রাবতীর এই রামায়ণ মৈমনসিং অঞ্চলে বহু স্ত্রীলোকের কণ্ঠস্থ। বিবাহ-বাসরে এবং অপরাপর মহিলা-সম্মেলন-উপলক্ষে এই রামায়ণ সর্ব্বদা গীত হইয়া থাকে। মেয়েরাই ইহার গায়ক, ইহার কবি স্ত্রীলোক, ইহার শ্রোতা ও গায়কেরাও অধিকাংশ স্থলে স্ত্রীলোক। পাঠক এই রামায়ণটিকে কাব্য বলিয়া ভুল করিবেন না। ইহা প্রত্যেক বিষয়ে পালাগানগুলির সঙ্গে এক পংক্তিতে স্থান পাইবার দাবী রাখে। প্রত্যেক ছত্রের পরে ‘গো’ শব্দটি পালাগানের সুরটি মনে জাগাইয়া দেয়। যদিও কবি সংস্কৃতজ্ঞ ছিলেন, তথাপি তিনি পালাগানেরই ভাষা ব্যবহার করিয়াছেন; সংস্কৃত সন্ধি ও সমাস প্রকরণ বাঙ্গালার ঘাড়ে চাপাইয়া দেন নাই। উপমাগুলিও তিনি বঙ্গপল্লীর নৈসৰ্গিক চিত্রগুলি হইতে সংগ্রহ করিয়াছেন—সংস্কৃতের ভাণ্ডার হইতে ধার করিতে যান নাই। আমরা এখন একরূপ নিশ্চিত ভাবে বলিতে পারি পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকার প্রথম ভাগে প্রকাশিত মলুয়া পালাটিও চন্দ্রাবতীর রচনা। সেই পালায় একটি বন্দনা পাওয়া গিয়াছে, যাহাতে কবি নিজের ভনিতা দিয়াছেন এবং মৈমনসিংএর লোকের চিরাগত বিশ্বাস মলুয়া পালাটি চন্দ্রাবতীরই রচনা। পালা কবিতার মধ্যে মলুয়া মধ্যমণিস্বরূপ। বিবাহিতা স্ত্রীর অপূর্ব্ব দাম্পত্য প্রেমই মলুয়ার মূল বিষয়। এই পালাটির আর এক নাম কাজীর বিচার। আমরা সেই নামটি পরিবর্ত্তন করিয়া নায়িকার নামেই উহাকে পরিচিত করিয়াছি। কবি নয়ানচাদ প্রণীত চন্দ্রাবতীর সম্বন্ধে যে পালা গানটি আছে তাহাও অতি অপূর্ব্ব। সেই পালাটিও মৈমনসিং গীতিকার প্রথম ভাগে প্রকাশিত হইয়াছে। চন্দ্রাবতীর পিতা সুপ্রসিদ্ধ মনসাদেবীর ভাসান-গায়ক কবি বংশীদাস ভট্টাচার্য বঙ্গ সাহিত্যের অন্যতম খ্যাতনামা ব্যক্তি। তিনি তাঁহার দুলালী কন্যা চন্দ্রাবতীকে সংস্কৃত