পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২৮
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

করিয়াছিলেন তাহার নৈসৰ্গিক সৌন্দর্য্য কবি যথাযথভাবে অঙ্কন করিয়াছেন। রাজপ্রাসাদ-সংলগ্ন উদ্যানবাটিকায় সখীদ্বয়ের মিলনও বেশ কবিত্বপূর্ণ। পালাগানটিতে একটা গ্রাম্য সৌন্দর্য্যের হাওয়া বহিয়া গিয়াছে। সেইটুকুই ইহার বিশেষত্ব।

 কুসংস্কারবশতঃ অপয়া শিশুকে বধ করা কিংবা বনবাস দেওয়া আমাদের দেশের একটা কাব্যকথা নহে। বঙ্গের শিশুদের অনেককে যেরূপ তাহাদের পিতামাতা নিজ হাতে তুলিয়া গঙ্গাসাগরে নিক্ষেপ করিয়াছেন, সেইরূপই নির্ম্মমভাবে আবার অনেকগুলি শিশুকে তাঁহারা পথে ফেলিয়া দিয়াছেন, কিংবা বনে শুকাইয়া মরিবার জন্য পরিত্যাগ করিয়াছেন। কাপালিকেরা কত শিশু চুরি করিয়া দেবতার পীঠস্থানে বলি দিয়াছে। শিশুদের পক্ষে এই কুসংস্কার মড়কের তুল্যই ভীষণ। আমরা কাজলরেখা পালায় (প্রথম খণ্ড, পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা) এইরূপ কুসংস্কারের পরিচয় পাইয়াছি। সুসঙ্গ দুৰ্গাপুরের রাণী কমলাও এইরূপ এক কুসংস্কারে স্বীয় জীবন বিসর্জ্জন দিয়াছিলেন। ইতিহাসেও আমরা এইরূপ কুসংস্কারের কিছু কিছু পরিচয় পাইতেছি। বঙ্গ-গগনের জ্বলন্তসূর্য্য প্রতাপাদিত্যকেও নিতান্ত দুর্ভাগা শিশু মনে করিয়া তঁহার পিতা বিক্রমাদিত্য বধ করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন। জ্যোতির্ব্বিদেরা গণনা করিয়া ঠিক করিয়াছিলেন যে এই শিশুর দ্বারা রাজপরিবারের এবং দেশের গুরুতর অনিষ্ট হইবে। প্রতাপাদিত্যের খুল্লতাত বসন্ত রায়ের চেষ্টায় শিশু প্রতাপাদিত্যের প্রাণরক্ষা হয়।

 আমাদের এই পালাগানগুলির ভিতরে সমাজ, রাজনীতি, ভাষাতত্ত্ব ও কবিত্ব প্রভৃতি সম্বন্ধে নানাদিক্ দিয়াই অনেক মূল্যবান্ উপাদান পাওয়া যায়। বঙ্গদেশীয় জনসাধারণের ইতিহাস-লেখক নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে এই উপকরণগুলি মূল্যবান্ মনে করিবেন।

শ্রীদীনেশচন্দ্র সেন