পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বীরনারায়ণের পালা

 বীরনারায়ণের পালাটি শ্রীনগেন্দ্রচন্দ্র দে ১৯২৯ সনে সংগ্রহ করেন। মৈমনসিংহের অন্তবর্ত্তী মুক্তাগাছার নিকট সলিদা গ্রামবাসী কালাচাঁদ মাল ইহার কয়েকটি পঙ্‌ক্তি নগেন্দ্রবাবুকে শোনায়। কিন্তু উক্ত মাল আর একটি লোকের নাম করে এবং বলে যে সেই ব্যক্তি পালাটি সমস্তই জানে। এই ব্যক্তির নাম সেখ পানাউল্লা এবং ইহার বাড়ী মৈমনসিংহ জেলার সাকুরিয়া গ্রামে। নগেন্দ্রবাবু পানাউল্লার নিকট এই পালার অনেকটা অংশ সংগ্রহ করেন। এবং অবশিষ্ট অংশ মৈমনসিংহ জেওলিয়া গ্রামের আর একটি লোকের নিকট প্রাপ্ত হন। ইহার নাম অপরিজ্ঞাত কিন্তু, ইহাকে লোকে ‘কালার বাপ’ বলিয়া ডাকে। দুঃখের বিষয় যদিও বহু পরিশ্রম করিয়া নগেন্দ্র বাবু পালাটি সংগ্রহ করিয়াছিলেন তথাপি তিনি ইহা সম্পূর্ণভাবে পান নাই। এই অসমাপ্ত অবস্থাতেই ইহা এখানে প্রকাশিত হইল।

 পালাগানগুলির সাধারণতঃ একটা লক্ষণ এই যে, উহাদের শেষ দিকে করুণ রস খুব জমাট বাঁধে এবং নায়ক-নায়িকার, বিশেষ নায়িকার শেষটা খুব গৌরবমণ্ডিত হয়। কিন্তু পরিসমাপ্তির দিকটা না পাওয়াতে আমরা হয়ত সেই রসাস্বাদ হইতে বঞ্চিত হইলাম।

 লেখা দেখিয়া মনে হয় পালাগানটি সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগের রচনা, কিন্তু এ বিষয়ে কোন অকাট্য প্রমাণ আমরা পাই নাই। আমরা পুনঃ পুনঃ ঐ প্রাচীন বঙ্গসাহিত্যে স্ত্রীলোকের উপর কঠোর সামাজিক শাসনের ব্যবস্থা পাইতেছি। এই নিষ্ঠুর সামাজিক বিধান অযোধ্যার মহারাজ্ঞীর সময় হইতে চলিয়া আসিতেছে। ফুলটি মাটিতে পড়িলে যেরূপ আর পূজায় লাগে না, মেয়েদের শরীরে সেইরূপ বাহিরের কোনরূপ হাওয়া লাগিলে তাঁহারা আর অন্তঃপুরবাসিনী হইবার যোগ্যা হ’ন না। একান্ত নিরপরাধী

৬৭