পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রতন ঠাকুর

 রতন ঠাকুরের পালাটি শ্রীযুক্ত চন্দ্রকুমার দে প্রায় এক বৎসর পূর্ব্বে মৈমনসিংহ জেলার কাঠঘর নিবাসী গাছিম সেখ ও অপর এক গ্রামের রামচরণ বৈরাগী নামক দুই ব্যক্তির নিকট হইতে সংগ্রহ করেন।

 এই পালাটির মাঝে মাঝে গদ্য রচনা; কিন্তু তাহা খুব বেশী নয়। পালাটি ২৬২ ছত্রে সম্পূর্ণ।

 পালাটিতে গীতিরসের প্রাচুর্য্য আছে। কাহিনীটি বেশ স্পষ্ট এবং ঘটনাগুলি সুকৌশলে গ্রথিত। কিন্তু নাট্যরস হইতে গীতিরসই ইহাতে সমধিক।

 আমরা অনেকগুলি পালায় (বিশেষতঃ যেগুলি চতুর্দ্দশ ও পঞ্চদশ শতাব্দীতে রচিত) সহজিয়া-ভাবের প্রেম বিশেষভাবে দেখিতে পাই। বর্ত্তমান পালাটি কতকটা পূর্ব্ব-প্রকাশিত “ধোপার পাটে”র (দ্বিতীয় খণ্ড—দ্বিতীয় ভাগ) অনুরূপ। সেখানে এক রাজকুমার এক রাজক-কন্যার প্রেমে পড়িয়া শেষে তাহাকে পরিত্যাগ করেন। এই পালাটিতেও রাজকুমার এক মালাকর-দুহিতার প্রেমে পড়েন এবং শেষে রাজপুত্রের বিশ্বাসঘাতকতায় মেয়েটির মৃত্যু হয়। ধোপার পাটের নায়ক রাজপুত্র অতি নির্ম্মম ও কৃতঘ্ন কিন্তু বর্ত্তমান পালাটিতে নায়ক কিছুদিনের জন্য এক পতিত নারীর মোহে আত্মবিস্মৃত হইলেও শেষে অনুতাপে দগ্ধ হইয়া জীবনের সমস্ত সুখ-সম্ভোগ বিসর্জন দিয়াছিলেন। সুতরাং তাঁহার চরিত্রের নষ্ট মহিমার কতকটা পুনরুদ্ধার হইয়াছিল।

 নায়িকার সম্বন্ধে বেশী কিছু বলিবার নাই। ইনি প্রেমে আত্মবিস্মৃত, একান্ত নির্ভরশীল ও অনন্যমনা-যেমন বহু পালাগানে পাইয়াছি, ইনিও সেই সকল রূপগুণের মাধুরী দিয়া আমাদের মনোহরণ করিয়াছেন। ইঁহাদের কোমলতা ও তেজস্বিতা উভয়ই অপূর্ব্ব। যিনি ‘ফুলসম সুকুমারী’ও