পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মলয়ার বারমাসী
৫৫১

ঘরে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন এবং জ্ঞাতসারে কোন অপরাধ করেন নাই। সুতরাং ইঁহাকে সমাজ-বহির্ভূত রাখা উচিত নহে।” গোঁড়া দলের নেতা ছিলেন নন্দু, তিনি বলিলেন, “যে ফুল একবার মাটিতে পড়িয়াছে, তাহা আর দেব পূজায় লাগে না। অদৃষ্ট-অনুসারে মানুষ ধন্যবান্ হয়, দরিদ্র হয়। তাহার দোষ থাকুক বা না থাকুক। সে কর্ম্মফল এড়াইতে পারে না। বিশুদ্ধ ব্রাহ্মণ-সমাজ চণ্ডাল-গৃহে প্রতিপালিত বালককে কখনই গ্রহণ করিতে পারেন না।” খুব জোরে তর্ক চলিল। গর্গের অসামান্য প্রতিষ্ঠা, বিদ্যাবত্তা এবং সমাজের উপর প্রভাবের গুণে, কতকগুলি ব্রাহ্মণ তাঁহাকে সমর্থন করিলেন। সভা-গৃহ তৰ্ক-কোলাহলে মুখরিত হইল। এদিকে যাহারা মুখে সায় দিয়াছিলেন, তাঁহারাও গোড়াদের দলে মিশিয়া ষড়যন্ত্র করিতে লাগিলেন। কঙ্কের সর্ব্বনাশের জন্য তাঁহারা এবার এক ফন্দি আঁটিলেন। তাঁহারা প্রচার করিয়া দিলেন, কঙ্ক শুধু চণ্ডালের অন্ন খায় নাই, সে মুসলমানের প্রসাদ খাইয়া তাহার নিকট মুসলমানি ধর্ম্মে দীক্ষা লইয়াছে। ইহা হইতেও গুরুতর দোষ আরোপ করা হইল; তাঁহারা প্রচার করিলেন, গৰ্গকন্যা লীলা কঙ্কের অনুরাগিনী হইয়া কলঙ্কিতা হইয়াছে। দেশে এই কথা প্রচার হওয়ার পরে ব্রাহ্মণদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইল। কঙ্ক প্রতিষ্ঠার শিখর-দেশে যতটা উঠিয়াছিলেন, তাঁহার অধঃপতনও ততটা সংঘটিত হইল। দেশের লোক ক্ষেপিয়া গিয়া তাঁহার সত্যপীরের পুথি তাহদের বাড়ী হইতে ছুড়িয়া ফেলিয়া দিল। কেহ কেহ তাহা আগুনে পুড়াইয়া ফেলিল। মুসলমানের পুঁথি ধর্ম্মগ্রন্থ বলিয়া পড়িয়াছে, এবং ঘরে রাখিয়াছে, এই ভাবিয়া দেশময় লোক প্রায়শ্চিত্ত করিল।

 এদিকে গৰ্গ পীর সম্বন্ধে কিছুই অবগত ছিলেন না, এবং লীলা সম্বন্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা যে সমস্ত মিথ্যা প্রমাণ উপস্থিত করিয়াছিল তাহাও তিনি অগ্রাহ্য করিতে পারিলেন না, কারণ তিনি অতি সরল প্রকৃতির লোক ছিলেন। এবার সরলে গরল উঠিল। কঙ্কের চরিত্রে সন্দিগ্ধ হইয়া তিনি উন্মত্তবৎ হইয়া পড়িলেন এবং কঙ্ককে বিনষ্ট করিয়া এবং তাহার পরে লীলার প্রাণনাশ করিয়া তিনি নিজে আত্মহত্যা করিবেন, এই সঙ্কল্প করিলেন। কঙ্ক গরু রাখিতে মাঠে গিয়াছে, লীলা তাহার জন্য অন্ন-