পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৫২
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

অন্ন- প্রস্তত করিয়া অপেক্ষা করিতেছে, এই সুযোগে গৰ্গ সেই অন্নে বিষ মিশাইয়া দিলেন। অপর গৃহ হইতে লীলা তাহার রুদ্র মূর্ত্তি এবং এই কুকার্য্য দেখিয়া ভয় ও বিস্ময়াভিভূত হইল। কঙ্ক গৃহে আসিলে পরে লীলা অশ্রুনেত্রে তাঁহাকে সকল কথা কহিল; কিন্তু কঙ্কের সংযম ও ধৈর্য্য কিছুতেই টলে নাই। সে লীলাকে বলিল, “গৰ্গ মহাপুরুষ, দেবতুল্য। ষড়যন্ত্রকারীদের অভিসন্ধিতে তাঁহার সরল প্রাণে ব্যথা লাগিয়া তিনি এই সকল কাজ করিয়াছেন, কিন্তু আমার নিশ্চয় বিশ্বাস তিনি অতি বুদ্ধিমান্ ব্যক্তি, শীঘ্রই সত্য কথা বুঝিতে পরিবেন। তুমি তোমার পরমারাধ্য পিতৃদেবের প্রতি শ্রদ্ধা হারাইও না, কিন্তু আমি আর এখানে থাকিব না।” গভীর মনোবেদনায় কঙ্ক সারারাত্রি বিনিদ্র অবস্থায় কাটাইয়া শেষ রাত্রিতে তন্দ্রার ঘোরে দেখিলেন যেন পিশাচেরা তাঁহাকে শ্মশানের আগুনে পোড়াইতেছে এবং এক গৌরকান্তি দিব্য মহাপুরুষ রক্ত কমলহস্তে তাঁহার বাহু ধারণ করিয়া তাঁহাকে সেই শ্মশানের পিশাচদের হস্ত হইতে মুক্তি দিয়া সঙ্গে লইয়া চলিয়াছেন। নিদ্রা-ভঙ্গে কঙ্ক বুঝিলেন, যিনি তঁহাকে উদ্ধার করিতে আসিয়াছিলেন—তিনি গৌরাঙ্গ। আর কাল বিলম্ব না করিয়া তিনি গৌরাঙ্গ-দৰ্শন-মানসে পশ্চিমদিকে রওনা হইলেন।

 লীলা কর্তৃক নিক্ষিপ্ত বিষাক্ত অন্ন খাইয়া সুরভি গাভীটি প্রাণত্যাগ করিল। ব্রাহ্মণের বাড়ীর গাভী গৃহকর্ত্তার প্রদত্ত বিষে মরিল, এই ঘোর অনাচার এবং দুর্ঘটনা গর্গের মনকে অভিভূত করিয়া ফেলিল। পূজার ঘরে তিনি লীলার সংগৃহীত পুষ্পবিল্বপত্র ও জল কলঙ্কিত মনে করিয়া সেগুলি ফেলিয়া দিলেন, এবং মন্দিরের অর্গল বন্ধ করিয়া তিন দিন তিন রাত্রি পর্য্যন্ত উপবাসে কাটাইয়া ধন্না দিয়া রহিলেন। “আমার এই বিপদে কি কর্ত্তব্য ভগবান্ আমাকে কহিয়া দাও, তাহা না হইলে আমি এইখানেই প্রাণত্যাগ করিব।” এই সঙ্কল্প করিয়া তিনি উপবাস করিতে লাগিলেন। চতুর্থ দিনে তিনি যে স্বপ্নাদেশ পাইলেন তাহার মর্ম্ম এই,—“তুমি মহাপাপী, তোমার নির্দ্দোষ পুত্রকন্যাকে মারিতে ষড়যন্ত্র করিয়াছিলে এবং স্বগৃহ-পালিত গাভীকে হত্যা করিয়াছ। লীলার হস্তের যে ফুল ফেলিয়া দিয়াছ তাহা দিয়াই আমাকে পূজা কর।” এই আদেশ প্রাপ্ত হইয়া গৰ্গ অনুতাপে পাগলের