পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জিরালনী

 জিরালিনীর পালাটি অসম্পূর্ণ। এই গানটি শ্রীযুক্ত চন্দ্রকুমার দে মহাশয় পীরসোহাগপুর গ্রামের রজনী কর্ম্মকার ও ভাদাই ফকির নামক বাউল-গায়কের নিকট হইতে সংগ্রহ করিয়াছেন। পীরসোহাগপুর গ্রামটি মৈমনসিংহের অন্তৰ্গত।

 এই গানটি কতকটা রূপকথার মত। আমরা শৈশবে রাজপুত্ত্রদের মাথায় কবচ বান্ধিয়া তাহাদিগকে পশু করিয়া রাখিবার অনেক গল্প শুনিয়াছি। কামরূপের মেয়েরা নাকি এই সব যাদুকরী বিদ্যায় সিদ্ধহস্ত ছিলেন। এই পালাটিতে রাজপুত্ত্রকে তাঁহার বিমাতা চুলের সঙ্গে ঔষধ বাঁধিয়া হরিণ করিয়া রাখিয়াছিলেন। দৈবাৎ ইনি রাজকুমারী জিরালনীর হাতে যাইয়া পড়েন এবং রাজকুমারীর যত্নে তিনি তাঁহার একান্ত বশীভুত হন। এই অবস্থায় একদা তাঁহার চুলের মধ্যে, কবচ ধরা পড়ে। কবচ উন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে রাজকুমার স্বীয় স্বাভাবিক অবয়ব প্রাপ্ত হন। জিরালিনীর সঙ্গে তাঁহার গন্ধর্ব্বমতে বিবাহ হইয়া যায়। রাজপুত্ত্র দিনে স্বর্ণবর্ণ হরিণ হইয়া বেড়াইতেন এবং রাত্রিতে মানুষ হইয়া রাজকুমারীর সঙ্গে প্রেমাভিনয় করিতেন। কিন্তু একদিন কবচটি হারাইয়া যাওয়াতে তাঁহার আর মৃগ হইবার উপায় বন্ধ হইয়া যায়। তখন উপায়ান্তর না দেখিয়া তিনি সাশ্রুনেত্রে রাজকুমারীর নিকট বিদায় গ্রহণ করিয়া সে দেশ ছাড়িয়া চলিয়া যান। ওদিকে জিরালনীর বৈমাত্রেয় ভ্রাতা দুলাই তাহাকে বিবাহ করিবার জন্য ক্ষিপ্তপ্রায় হয়। বৈমাত্রেয় ভাইকে বিবাহ করা যায় কিনা রাজা তাঁহার সভাপণ্ডিতদের নিকট এই প্রশ্ন উত্থাপিত করেন। তাঁহারা তৈলবটের লোভে শিরঃসঞ্চালনপূর্ব্বক রাজার ইচ্ছার অনুকূল মত প্রদান করেন। ঘোর বিপদে পড়িয়া জিয়ালিনী নদীগর্ভে নিপতিত হন এবং দৈবক্রমে এক জেলের