পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

রহমান নামক এক গায়ক এই পালাটির সামান্য কতকটুক তখন আবৃত্তি করিয়াছিল। মোটের উপর বলিতে কি এই পালা যে সংগৃহীত হইবে এমন ভরসা আমার ছিল না। গত কয়েক মাস এই পালাটি উদ্ধারের জন্য আমি প্রাণান্ত পরিশ্রম করিয়াছি।

 গত ফেব্রুয়ারী মাসে মহিষখালী দ্বীপে শ্রীধনঞ্জয় বড়ুয়া নামে একজন জরীপের ডেপুটির সঙ্গে আমি এ পালার বিষয় আলোচনা করিয়াছিলাম। তিনি আমাকে সাতকানিয়া থানার অন্তঃপাতী ‘গোরস্তান’ নামক গ্রামে যাইতে বলিয়াছিলেন, কেননা অল্পদিন পূর্ব্বে তিনি জরীপের কাজে যাইয়া সেখানে এই পরীবানুর পালা শুনিয়াছিলেন। কিন্তু আমি গোরস্থানে অনেক খোঁজ করিয়াও সেই পালাগায়কের সন্ধান পাই নাই। আরাকানের অন্তৰ্গত মংভু সাবডিভিশনের মৌলবী আবুল হালিম নামক একজন সঙ্গতিপন্ন ব্যক্তি আমাকে এ পালার কিছু বিবরণ জানাইয়াছিলেন। আরাকানের সেই সুধর্ম্ম নরপতির যে রাজধানী ছিল তাহার বর্ত্তমান নাম মেয়ং (Myohong), সেখানে এখনও সুজার মসজীদ এবং সুজার দীঘি আছে। এই পালা সংগ্রহের ব্যপদেশে আমি ছোট-বড় অনেকের নিকট গমন করিয়াছি; কেহ হয়ত আমায় কিছু সাহায্য করিয়াছেন, আবার হয়ত কাহারও নিকট হইতে হতাশ হইয়া ফিরিয়া আসিয়াছি। সেই হিন্দুবৰ্জিত মুসলমান পল্লীগুলিতে কখনও ভাত জুটিয়াছে কখনো বা উপবাসী ফিরিয়া আসিয়াছি।

 তাহার পর আমি অনেক সন্ধান করিয়া পেরুয়া দ্বীপে উপস্থিত হই। সিরাজ মিঞা সেইখানের জমিদার। তিনি বড়ই রসগ্রাহী এবং সৌখীন লোক। আমি তাহার নিকট যখন পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকার ৩য় খণ্ড হইতে কাফন চােরার পালাটি আবৃত্তি করিয়াছিলাম তখন তিনি আমাকে আনন্দে জড়াইয়া ধরিয়াছিলেন। আমি পেরুয়া দ্বীপে সাত দিন তাঁহার বাড়ীতেই ছিলাম। তিনি ১৫৷১৬ মাইল দূরবর্ত্তী স্থান হইতেও আমার নিকট গায়কদের উপস্থিত করাইয়াছিলেন। তন্মধ্যে উজান টেঁইয়া গ্রামনিবাসী মনসুর আলীর নিকট হইতে এই পালার অধিকাংশ সংগৃহীত হইয়াছে। সেই অঞ্চলে এই গানটি ‘পরীবানুর হাঁহলা’ নামে পরিচিত।