পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (চতুর্থ খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চাঁদরায়-সোণারায়

 এই পালা-সংগ্রাহক শ্রীযুক্ত চন্দ্রকুমার দে এই পালা সম্বন্ধে যে বিবরণ পাঠাইয়াছেন তাহা নিম্নে উদ্ধৃত হইল। “চান্‌রায়ের পিতা কৃষ্ণ চৌধুরী নবাব মুরসিদ কুলি খাঁর একজন প্রিয় কর্ম্মচারী ছিলেন। তাঁহার পূর্ব্ব উপাধি তলাপাত্র ছিল। নবাব সরকারের অনেক দুরূহ কার্য্য অসামান্য কৃতিত্বের সহিত সম্পন্ন করিয়া কৃষ্ণ চৌধুরী এককালে কানুনগোর পদ প্রাপ্ত হন। তৎপরে ময়মনসিংহের তদানীন্তন কোনও ভূম্যধিকারী নবাবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করিলে কৃষ্ণ চৌধুরী বিদ্রোহ দমনের জন্য প্রেরিত হন এবং ছলেবলে বিদ্রোহ দমনে সমর্থ হন। এই সময়ে ময়মনসিংহের দত্ত ও নন্দীবংশীয়েরা জমিদারী শাসন করিতেছিলেন। অকস্মাৎ দৈবদুর্ব্বিপাকে তাঁহাদের দেয় রাজস্ব পথিমধ্যে দস্যুকর্ত্তৃক লুষ্ঠিত হওয়ায় তাঁহাদের সৌভাগ্যের দিন অন্তর্হিত হয়। নবাব লুটের কথা অবিশ্বাস করেন এবং কৃষ্ণ তলাপাত্রকে চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত করিয়া ময়মনসিংহের জমিদারী ফরমান প্রদান করেন।

 শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র চাঁদরায় আলিবর্দ্দি খাঁ নবাবের আমলে রাজস্ব-বিভাগের প্রধান কর্ম্মচারীর কাজ করিতেন। প্রবাদ ঘোড়াঘাট চাকলার কোনও দুর্দ্দান্ত মুসলমান জমিদার বিদ্রোহী হইলে তাহাকে শাসন করার জন্য নবাব আলিবর্দ্দি খাঁ চাঁদরায়কে তথায় প্রেরণ করেন। চাঁদরায় প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা না করিয়া গোপনে বিনা রক্তপাতে যাহাতে কার্য্যসিদ্ধ হয় তাহারই উপায় চিন্তা করিতে থাকেন এবং কতকগুলি সুবৃহৎ সুদৃশ্য অশ্ব সঙ্গে করিয়া অশ্বব্যবসায়ী সদাগর সাজিয়া তথায় অবস্থিতি করেন। তাঁহার চেহারা অতি সুন্দর ছিল, তাঁহার অপূর্ব্ব সুন্দর রূপ দেখিয়া অনেকে তাঁহাকে ছদ্মবেশী রাজপুত্র মনে করিতে লাগিল। ক্রমে জমিদার-পত্নী তাঁহার অপরূপ রূপের কথা শুনিয়া ও পরে দেখিয়া