পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

डूमिका S8 থাকে। সাপের মুখে অনেক ডাল-শিকারী প্ৰাণ হারাইত। এখন চট্টগ্রামে ঐরূপ ডাল-শিকারী আর দেখা যায় না ! এখনও চট্টগ্রাম ও ইহার পূর্বতর পার্বত্য প্রদেশগুলির অধিবাসীদের মধ্যে অনেক রকম শিকার-পদ্ধতি দেখা যায়। ইহাদের খড়গ ও তীর কখনই পশুর নখ ও দন্তের নিকট হটিয়া যায় নাই। এই খেদার পালা-গানটিতে জানিতে পাৰা যায় যে, পালা-গায়কগণের মতে হস্তীর মত কোন জন্তুই ভয়াবহ নহে। তাহার কারণ ইহারা দলবদ্ধ । যাহারা বন্যহস্তী দেখিয়াছেন তাহারা জানেন, পোষা হাতী দেখিয়া হস্তিজাতির ভীষণতা অনুভব করা যায় না। যখন ইহারা দলবদ্ধ হইয়া আগমন করে তখন নববর্ষাগমে দলিত-অঞ্জননিভ বিরাটু মেঘপুঞ্জের সঙ্গে তাহদের তুলনা হইতে পারে। কৃষক-কবি লিখিয়াছেন, বহুক্রোশ ব্যাপিয়া শত শত হস্তী একসঙ্গে বাস করে ; তাহদের আধুষিত বিস্তৃত বনভূমি একেবারে মরুর ন্যায় নিৰ্জন ও ভয়াবহ । সেই স্থানের উদ্ধে কোন পক্ষী উড়িতে সাহস পায় না । ইহাদের ভয়ে নিকটবৰ্ত্তী জলপ্রবাহে কোন মৎস্য সন্তরণ করে না ; সিংহ, ব্যাস্ত্ৰ, ভল্লােক প্রভৃতি হিংস্ৰ পশুগুলি সেই অঞ্চল হইতে বহুদূরে বাস করে। ইহারা যখন একত্ৰ বৃংহণ করে তখন মনে হয়, যেন জগতের ভিৎ ধ্বসিয়া পড়িবে। অতি প্ৰকাণ্ড বৃক্ষগুলি ইহারা শুণ্ডদ্বারা আকর্ষণ করিলে তাহাদের সপ্ততালভেদী শিকড় শিশুর ক্রীড়নকের ন্যায় উপাড়িয়া আসে। এই সকল বর্ণনায় কৃষক-কবি কতকটা কল্পনার দৌড় দেখাইয়া লইয়াছেন, কিন্তু সর্ববাপেক্ষা সমধিক অতিরঞ্জন আমরা পাই যেখানে কবি বলিতেছেন যে, হস্তিনীর গর্ভে এক একটি শাবক এগার বৎসর বাস করিয়া জগতে অবতীর্ণ হয় এবং যখন হস্তিনীর প্রসব-বেদন উপস্থিত হয় তখন তাহার। চীৎকারে সমস্ত গিরিকন্দির বেদনাতুর হইয়া প্ৰতিধ্বনি করিয়া থাকে। কবি পালার প্ৰথমে লিখিয়াছেন যে, এই বৃহৎ হস্তীর চক্ষু-দুইটি ক্ষুদ্র ; ইহা মঙ্গলময় বিধাতার অতি কল্যাণকর বিধান ; যেহেতু, হস্তী যদি নিজের বিরাটু বপু দেখিতে পাইত। তবে বিধাতার সৃষ্টি রক্ষা পাওয়া সুকঠিন হইত। হায় ! আমাদেরও কি সেই দশা নয় ? “ভাই ভাই ঠাই ঠাই’ হইয়া আমরা যে কত প্ৰকাণ্ড তাহা প্ৰতিমুহূৰ্ত্তে ভুলিয়া যাইতেছি। হে ভগবান! আমাদিগকে চক্ষু দাও যেন আমরা আমাদের অখণ্ড অবয়ব দেখিতে পাই।