পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७ পূর্ববঙ্গ গীতিকা ছিল। সে রমণীদিগের সংস্পর্শে আসিবার ভয়ে লোকালয় হইতে বহুদূরে নদীতীরে কুটীর বঁাধিয়া বাস করিত, এবং দিনরাত্রি অক্লান্ত পরিশ্রম করিয়া যে সকল রোগীর চিকিৎসা করিত, তাহদের নিকট একটি কপৰ্দকও লাইত না। কিন্তু জীবনসন্ধ্যায় সে অদৃষ্টের ফেরে পড়িয়া গেল। মণির যৌবন পার হইয়া প্ৰৌঢ়ত্বের শেষ পৈঠায় পা দিয়াছে, এমন সময়ে খবর পাইল যে তাহার নিকটবৰ্ত্তী গ্রামের কোন এক ব্যক্তি সৰ্পকর্তৃক দষ্ট হইয়াছে। অপরাপর ওঝারা যখন যথেষ্ট চেষ্টা করিয়াও তাহাকে আরোগ্য করিতে পারিল না, তখন রোগীর বন্ধুবান্ধবের তাহাকে মণিরের নিকট লইয়া গেল। কিন্তু মণির এবার যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াও তাহাকে বঁাচাইতে পারিল না। যে হস্ত সর্বদা বিজয়ী, আজ তাহার হার হইল। এই সৰ্পদষ্ট মৃত ব্যক্তির একটি ফুটুফুটে ফুলের মত মেয়ে ছিল। যখন তাহার পিতাকে সকলে কবর দিতে লইয়া গেল, তখন সেই মেয়েটি ধূলায় পড়িয়া কঁদিতে লাগিল। তাহার নিকট আত্মীয় কেহ ছিল না। অপয়া বলিয়া দূর আত্মীয়ের কেহ তাহাকে গ্ৰহণ করিতে স্বীকৃত হইল না । মণির রোগীকে ভাল করিতে না পারিয়া অত্যন্ত দুঃখিত হইয়াছিল। মেয়েটির দুর্দশা দেখিয়া সহজেই তাহার প্রাণ বিগলিত হইল। সে শিশুটিকে কোলে লইয়া তাহার নির্জন কুটীরে চলিয়া গেল এবং আদর করিয়া তাহার নাম * রাখিল মাঞ্জর মা”। বাড়ন্ত চাঁদের মত দিনে দিনে শিশুর শ্ৰীবৃদ্ধি হইতে লাগিল। সে অতি যত্নে গৃহকৰ্ম্ম করিতে শিখিলা। যে সেবাশুশ্রুষা মণির জীবনে একদিনও পায় নাই, এখন সে নিত্যই সেই অনাস্বদিতপূর্ব সুখভোগ করিতে লাগিল । এদিকে যখন তাহার বয়স প্ৰৌঢ়ত্বের গণ্ডী উত্তীর্ণ হইয়া বাৰ্দ্ধক্যের কোঠায় পড়িয়াছে, চুলের অনেকগুলি সাদা হইয়া গিয়াছে, তখন বালিকা পূর্ণ শতদলের ন্যায় যৌবনশ্ৰীতে ফুটিয়া উঠিয়াছে। তাহার মনে ছিল, “এই রমণী একান্ত নিষ্কলঙ্ক, ইহাকে কোন দুরাত্মার হস্তে আমি সমর্পণ { করিব না। যাহাকে চােখে চােখে রাখিয়া সতর্কতার গুঢ় বন্ধনীর মধ্যে লালনপালন করিয়াছি, সেই আদরপালিত অনাত্ৰাত কম্বুমটিকে কাহার