পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 পূর্ববঙ্গ গীতিকা করিয়াছিলেন। বৈষ্ণবপদে রাধাের নৃত্য সম্বন্ধে অনেকগুলি সুন্দর পদ আছে। একটিতে লিখিত আছে, একটি ধনুকের মত স্থানে গণ্ডী নির্দেশপূর্বক কৃষ্ণ রাধাকে নাচিতে অনুরোধ করিতেছেন। এত দ্রুতগতিতে নাচিতে হইবে যে নূপুর-গুঞ্জন স্থির হইয়া যাইবে, শাড়ীর অচল দুলিতেছে। এরূপ বোধ হইবে না,-আতিগতিতে স্থৈৰ্য্যের বিভ্ৰম জন্মাইবে । কি তালে নাচিতে হইবে, কবি তাহা নির্দেশ করিয়া দিয়াছেন। সখীরা বাজীর সর্ত ঠিক করিয়া দিয়াছেন,--যাদি রাধা হারেন, তবে কৃষ্ণ র্তাহার বেশির ও কঁাচলী লাইবেন, এবং জয়ী হইলে কৃষ্ণকে তাঁহার বড় সাধের মুরলীটি রাধাকে দিতে হইবে। বঙ্গদেশের গীতিকথায় কোন রাজকন্যার বা সদাগরের কন্যার কৌশলপূর্বক দেবসভায় যাইয়া নৃত্য করিবার প্রসঙ্গ অনেকগুলিতেই পাওয়া যায়। আমাদের দেশের ইতিহাস নাই। এই সমস্ত উপাখ্যান অলীক হইলেও ইহাতে চিৱন্তন কোন প্ৰাচীন প্রথার আভাস পাওয়া যায়, এ বিষয়ে ज्लgन्जङ् काशैि । পূর্ববঙ্গের গীতিকাগুলি পাঠ করিলে দৃষ্ট হইবে হিন্দুরমণীরা মধ্যযুগে কিরূপ ঘোর বিপদের সম্মুখীন হইয়াছিলেন। একদিকে পর্তুগীজ জলদসু্য, অপরদিকে দুৰ্দান্ত মগ তস্কর এবং মুসলমান গুণ্ডারা তঁহাদের প্রতি অবধিশুন্য অত্যাচার করিয়াছে। কোন হিন্দুরমণীর নৃত্যগীতাদি গুণের ংবাদ পাইলে ঐ সকল দাসু্যরা লোলুপদৃষ্টিতে তাহার প্রতি লক্ষ্য রাখিত। মলুয়া, শোনাই প্রভৃতি পল্লী-নায়িকাদের কথা অনেকেই অবগত আছেন। এখন পুনরায় সেইরূপ অত্যাচার আরম্ভ হইয়াছে, ইহার শেষ কোথায় জানি না। তবে মুসলমান নবাব ও আমিরদিগের নিযুক্ত “সিন্দুকী” নামক গুপ্তচরেদের দ্বারা সংবাদ প্ৰচারিত হওয়ার ভয়ে স্ত্রীলোকেরা কলাবিদ্যার চর্চা ছাড়িয়া দিয়াছিলেন ইহাতে কোন সন্দেহ নাই । যদিও সমাজের উচ্চস্তর হইতে উক্ত বিদ্যার অনুশীলন তিরোহিত হইয়াছিল, তথাপি নিম্নশ্রেণীর স্ত্রীলোকদিগের মধ্যে নৃত্যগীত প্রচলিত ছিল। সাবেকী কবিগানের আসরে আমরা নৃত্যপরায়ণ রমণীগণের নানারূপ অঙ্গভঙ্গীর ও তান-লয়-বিশুদ্ধ সঙ্গীত-জন্তানের পরিচয় পাইয়াছি। এ সম্বন্ধে এ কথাটি মনে রাখা উচিত যে, যদিও গণিকাদিগের মধ্যেই এই