পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (তৃতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৫০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা 86 প্রথার বিশেষ প্রচলন দৃষ্ট হইয়া থাকে, কুলললনারাও যে সময়ে সময়ে এই বৃত্তি অবলম্বন করিতেন, তাহার দৃষ্টান্ত দুর্লভ নহে। নিম্নশ্রেণীর সুপ্ৰসিদ্ধ গায়ক মধু কাণের পরিবারের মধ্যে এখনও স্বামী, স্ত্রী ও দুহিতারা একত্ৰ হইয়া আসরে গান করিয়া থাকে । সুলা কবি মৈমনসিংহ জেলায় প্রায় এক শতাব্দী পূর্বে সঙ্গীতবিদ্যায় বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করিয়াছিল। ঐ জেলার ভদ্রপরিবারের মধ্যে যত উৎসব হইত, সুলার গান না হইলে তাহা জমিত না। আমরা নিম্নে তাহার জীবনকথা লিপিবদ্ধ করিতেছি । শিশুকাল হইতেই সুলা তাহার মধুরকণ্ঠের পরিচয় দিয়াছিল। বালক-বালিকাদিগকে লইয়া সে সেই বয়সেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গানের দল বঁধিত এবং সে স্বয়ং মূল গায়েনের ভূমিকার অভিনয় করিত। তাহার পিতা রামদেব কন্যার গানে মুগ্ধ হইয়া সর্বদা তাহাকে কাছে-কাছে রাখিত । সুলার চেহারা খুব সুন্দর ছিল না ; কিন্তু “কোকিল যে কালো তা’তে কিবা আসে যায় ?” যখন এই বালিকা মধুর কণ্ঠে গান করিত, তখন ঠাকুরকোণা গ্রামের লোকেরা মুগ্ধ হইয়া শুনিত । রামদেব সুলার কৈশোরেই জয়হরি নামক একটি সুদৰ্শন বালকের সঙ্গে তাহার বিবাহ দিয়াছিল । এই বালক দেখিতে যেরূপ সুশ্ৰী ছিল সেইরূপই নানাবিধ গুণে বিভূষিত ছিল। রামদেবের ইচ্ছা ছিল তাহাকে ঘর-জামাই করিয়া রাখা । কিন্তু মানুষ যাহা ভাবে দৈববিধান অনেক সময়ে তাহার প্রতিকূল হয়। অতি অল্পবয়সেই জয়হরি সংসারের প্রতি বিতৃষ্ণ হইল এবং একদিন সে কোথায় ছুটিয়া পলাইল তাহার সন্ধান আর জীবনে মিলিল না। সুলা চিরদিন স্বামীর প্রত্যাগমনের প্রত্যাশায় পথের পানে চাহিয়াছিল। তাহার দীর্ঘ জীবনের মধ্যে একদিনও সে আশা ত্যাগ করে নাই ; তাহার সীখিতে আজীবন সিন্দুর-লেখা চিহ্নিত ছিল ; তাহার হাতের শাখা সে ভাঙ্গে নাই এবং যদিও সমস্ত বিষয়ে সে জীবনে বৈরাগ্যের সাধনা করিয়াছিল। তথাপি তাহার স্বামীর আগমনের জন্য সে যেন নিত্য নিত্য নবভাবে প্ৰস্তুত হইয়া থাকিত। এই গোপিনী-কীৰ্ত্তনে প্ৰথমাংশে (২, ২৯-৩৪ ছত্ৰে ) যেরূপ করুণ ভাবে সুলা তাহার স্বামীর উল্লেখ করিয়াছে তাহাতে একদিকে তাহার নিদারুণ