পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মইষাল বন্ধু
৬৫

আইজের বাঁশীতে কেন বাজে নয়া গান।
আইজের বাঁশীতে কেন ধরে নয়া তান॥৬৮
আইজ কেন মইষাল তোমার হইল এমন।
আইজ কেন হাতের বাঁশী হইল দুষ্‌মণ॥৭০
নিতি নিতি বাজে বাঁশী এমন না হয়।
আইজ কেন বাঁশীর গানে পরাণ সংশয়॥৭২
ফুলটুঙ্গী ঘরে[১] কন্যা সিঞ্চা[২] কাপড় ছাড়ে।
কেওয়া[৩] বনে বাজে বাঁশী অইনা মধুর সুরে॥৭৪

এই বাঁশী সেই বাঁশী নয় বাজে নয়া তানে।
বিপথে মইষাল বুঝি মরিল বাথানে॥৭৬
মইষ রাখ মইষাল বন্ধুরে ক্ষীর নদীর পারে।
মজিল অবলার মন তোমার বাঁশীর সুরে॥৭৮
মেঘে কেন ভিজ রে বন্ধু রইদে কেন পুড়।
গাছের ডাল ভাঙ্গিয়া বন্ধু কেন না মাথায় ধর॥৮০
আমিরে অবুলা[৪] নারী না সহে পরাণ।
শীতল অঞ্চল দিয়া মুইছা দিতামরে ঘাম॥৮২

এইমতে সুন্দর কন্যা করয়ে ক্রন্দন।
বাথানে মইযালের কথা শুন সভাজন॥৮৪


  1. ফুলটুঙ্গী ঘরে=পুকুরের জলের ভিতর হইতে উত্থিত গৃহ, বা পুষ্প কুঞ্জ। পূর্ব্বে ধনীদের গ্রীষ্মবাসের জন্য এইরূপ আরাম গৃহ নির্ম্মিত হইত। ‘টুঙ্গী’ শব্দ ‘তুঙ্গ’ শব্দের অপভ্রংশ; উচ্চ থাকার দরুণ এইরূপ নাম হইয়াছে।
  2. সিঞ্চা=ভিজা।
  3. কেওয়া=কেতকী।
  4. অবুলা=অবলা, অথবা যে কথা বলিতে পারে না, যথা—
    “বদন থাকিতে না পারি বলিতে, তেঁই সে অবোলা নাম।” চণ্ডীদাস।