পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
২১

আছে, তাহাতে এই দেশ যে এক কালে কত সমৃদ্ধ ছিল তাহার আভাস পাওয়া যায়। বঙ্গদেশে প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড নদ-নদী থাকার দরুণ তাহাদের ভঙ্গপ্রবণ তীরদেশে বৃহৎ প্রস্তর বা ইষ্টকালয় নির্ম্মাণ নিরাপদ নহে। এই জন্যই বঙ্গীয় শিল্পীরা তাহাদের মনের মত করিয়া “বাঙ্গালা” ঘর রচনা করিত। এই বাঙ্গালা ঘরে চূড়ান্ত কারুকার্য্য প্রদশিত হইত এবং ইহার এক এক খানির জন্য গৃহস্বামীরা যে অর্থ ব্যয় করিতেন, তাহাতে হয়তঃ ক্কচিৎ বিশাল প্রস্তরপুরী নির্ম্মিত হইতে পারিত। কোনও বৃহৎ প্রকোষ্ঠে সময় সময় ৫২টি পর্য্যন্ত দরজা থাকিত। (১৪৩ পৃষ্ঠা, ৩-৪ ছত্র)। গৃহের কড়িবর্গা খাটি সোণার মোড়া হইত। (১ পৃঃ, ২ ছত্র)। চাদগুলি মাছরাঙ্গা পাখী এবং ময়ূরের পালকে আবৃত হইয়া সূর্য্য কিরণে ছবির ন্যায় ঝলমল করিত। ছাদ কখন কখনও মণিমুক্তাখচিত সুবর্ণ পত্রে মোড়া হইত এবং তাহাতে স্থানে স্থানে অভ্রখণ্ড সংলগ্ন করা হইত। অবশ্য কবির এই সকল বিবরণের উপর আমরা আস্থা স্থাপন করিতে পারি না; কিন্তু অনেক বাদ সাদা দিয়া এই সকল আখ্যান গ্রহণ করিলেও যে দেশের একটা বিশাল সমৃদ্ধির ধারণা হয়, তাহা একেবারে মনঃকল্পিত বলিয়া বোধ হয় না। জাহাজের মাস্তলগুলি খাটি সোণার পাতে আবৃত থাকিত এবং তাহার উপরে স্বর্ণসূত্রে গ্রথিত সমুজ্জ্বল পতাকা উড্ডীন হইত। বণিক কন্যারা রাজকন্যার মত সম্মান পাইতেন। সাধারণতঃ তাঁহদের এক এক জনের বারটি করিয়া সখী থাকিত (১৪৫ পূঃ ১ ছত্র)। খাদ্য দ্রব্যাদির জন্য স্বর্ণ পাত্র ব্যবহৃত হইত। রাজরাজড়ারা সাত লক্ষ টাকা আয়ের জমিদারী উপহার দিয়া প্রণয়িণীর মনোরঞ্জন করিতেন (১৭৫ পৃঃ, ৭২ ছত্র)। যখন কোনও জাহাজ সমুদ্র যাত্রা হইতে ফিরিয়া আসিত, তখন বণিকবধূরা নানারূপ ধর্ম্মানুষ্ঠান করিয়া সেই জাহাজ নদীর তীরে বরণ করিয়া বাণিজ্যের দ্রব্যাদি গৃহে লইতেন। যতই কেন অতিরঞ্জন না থাকুক, এই সকল কথা আমরা যখন বাঙ্গালার ব্রতকথা, রূপকথা এবং পালাগান সর্ব্বত্রই প্রায় এক ভাবে পাইতেছি, তখন কবিরা যে নিতান্ত আকাশ-কুসুম কল্পনা করেন নাই, তাহা অনুমান করা যায়। [শ্রীযুক্ত দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুদারের ঠাকুরদাদার ঝুলির ৬৪ হইতে ৬৮ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।]

 সমাজের যে চিত্র ভেলুয়াতে পাওয়া যাইতেছে, তাহা আমাদের ব্রাহ্মণ-