পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
২৩

 এই পালাগানটির রচনা অত্যন্ত শিথিল; পয়ারের নিয়ম প্রায়ই রক্ষিত হয় নাই। এবং পূর্ব্বেই বলিয়াছি ইহাতে কবিত্বেরও তেমন কোনও নিদর্শন নাই। তথাপি ঘটনার কৌশলময় পর পর সন্নিবেশের দরুণ পাঠকের কৌতূহল সর্ব্বত্র পরিতৃপ্ত হইয়াছে। বিশেষতঃ চৌগঙ্গায় যখন আবুরাজা অপ্রত্যাশিতভাবে নানাদিক্ হইতে শত্রুদের জাহাজ কর্ত্তৃক পরিবৃত হইলেন, তখনকার দৃশ্য নাট্যকলা-নিপুণতায় বিচিত্র হইয়া উঠিয়াছে।

 চাটগাঁ হইতে বহুদিন পূর্ব্বে “ভেলুয়া” সুন্দরী নামক কাব্য হামিদুল্লা নামক জনৈক মুসলমান লেখক প্রকাশ করিয়াছিলেন। আমার “বঙ্গভাষা ও সাহিত্যে” তাহার উল্লেখ করিয়াছি। ভেলুয়ার আরও একটি পালা আমরা পাইয়াছি; উহা এই গান হইতে সম্পূর্ণরূপে স্বতন্ত্র। মুসলমান এবং হিন্দু উভয় শ্রেণীর লোকেই অনেক পালা গান বাজারে প্রকাশ করিতেছেন, কিন্তু এই অর্দ্ধশিক্ষিত প্রকাশকগণ পালাগানের ভাষা পরিবর্ত্তন করিয়া এবং তন্মধ্যে ভারতচন্দ্রী রূপবর্ণনা এবং অশ্লীলতা ঢুকাইয়া দিয়া তাহা এমন বিকৃত করিয়া ফেলেন যে তাহাতে কৃষককবিদের সরল হৃদয়ের মাধুর্য্য, পবিত্রতা এবং অশিক্ষিত রচনাভঙ্গীর সৌন্দর্য্য আর কিছুই থাকে না। কৃষকদের ভাটিয়াল সুর যখন নিয়মাবদ্ধ পয়ারে পরিণত করা হয়, তখন তাহা একেবারে উৎকট হইয়া উঠে।

 চন্দ্রকুমার এই পালাটি বাণিয়াচঙ্গ হইতে সংগ্রহ করিয়াছেন।