পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

কড়ি পর্য্যন্ত যাত্রীদিগের নিকট হইতে আদায় করিত। যদি সাধারণতঃ কোন রূপ মুদ্রার প্রচলন থাকিত, তবে এতগুলি কড়ির ব্যবহার কখনই হইতে পারিত না। নদীপথসমূহ দস্যুতস্করের ভয়ে অত্যন্ত বিপজ্জনক ছিল। এই সমস্ত দস্যুভীতি ও অরাজকতার বর্ণনা ও আনুষঙ্গিক বিবরণ হইতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, এই পালা ইংরেজাধিকারের কিছু পূর্ব্বে অর্থাৎ মুসলমানাধিকারের অবনতির দিনে রচিত হইয়াছিল; গানটির রচনাকাল সম্ভবতঃ অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ।

 স্ত্রীলোকেরা তীর চালনায়, এমন কি মল্লবিদ্যা ও অন্যান্য পুরুষোচিত ব্যায়ামক্রীড়ায় দক্ষতালাভ করিত, পালাগানটিতে ইহার পরিচয় পাওয়া যাইতেছে। সম্ভবতঃ কাব্য রচনা কালে হিন্দু সমাজে এই প্রথা নিম্ন-শ্রেণীর মধ্যে প্রচলিত ছিল। শুধু এই পালায় নহে, ফিরোজ খাঁর পালাতেও আমরা পাইয়াছি যে ১৭শ শতাব্দীতে কেল্লাতাজপুরক্ষেত্রে সখিনা সম্রাট্-বাহিনীর সহিত যুদ্ধ করিয়াছিলেন। নৌকার সহিত গুপ্তভাবে কাছি বাঁধিয়া ডাকাতেরা কিরূপে মাঝগাঙ্গে যাত্রীদিগকে নিহত করিয়া ধনরত্ন অপহরণ করিয়া অদৃশ্য হইত, এবং লুণ্ঠিত দ্রব্য কিরূপে ভূগর্ভে প্রোথিত করিয়া সন্দেহের কারণ পর্য্যন্ত অপনোদন করিত, সেই সকল বর্ণনা যেন মুসলমান রাজত্বের শেষ অধ্যায়ের উপর পটোত্তোলন করিয়া দেখাইতেছে, এই বর্ণনাগুলি বাস্তব হইলেও কাব্যরাগরঞ্জিত এবং কৌতুকাবহ।

 আমির ও জামাইৎউল্লা নামক দুই ব্যক্তি ভণিতায় পালারচয়িতা বলিয়া একাধিকবার নিজেদের উল্লেখ করিয়াছেন। পালার অধিকাংশই জামাইতের রচনা; কিন্তু আমির রচনাভঙ্গীতে জামাইৎউল্লার এমন সুন্দর অনুকরণ করিয়াছে যে উভয়ের রচনা পৃথক করা কষ্টকর। গায়েনেরা অনেকসময় কবিত্বের দাবী ফাঁদিয়া ভণিতায় নিজেদের নাম ঢুকাইয়া দিতেন; এই ভাবে আমিরের নাম ভণিতায় প্রবেশ লাভ করিয়া থাকিতে পারে। তাহা হইয়া থাকিলে আমির একজন পালাগায়ক মাত্র।

 কবিত্বের দিক্ দিয়া পালাটির খুব উচ্চদর দিতে না পারিলেও, ইহা কোন কোন গুণে যে খুব চিত্তাকর্ষক হইয়াছে তাহার সন্দেহ নাই। পারিবারিক ও সমাজিক ঘটনাসমূহের অবিকল ও কৌতূহলপ্রদবর্ণনা পালাটির