পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

বলা দরকার যে, এই সংস্করণে যে রমণীরা ইন্দ্রপুরীর কন্যা বা অপ্সরা বলিয়া অভিহিত, তাহারাই অন্যত্র পরী নাম উল্লিখিত হইয়াছে। কোন কোন স্থানে ইহাদের ডানা দেওয়া হইয়াছে। স্থানে স্থানে এইরূপ বিজাতীয় অবয়বে উপস্থিত হইলেও, এই গল্পটি যে খাঁটি বাঙ্গালা রূপকথা তৎসম্বন্ধে কোনও সন্দেহ নাই। পরবর্ত্তী সময়ে মুসলমানী প্রভাবে অপ্সরারা পরী হইয়া গিয়াছেন। এখানে কিন্তু ইহারা ইন্দ্রপুরীর কন্যারূপেই প্রথমতঃ উপস্থিত হইয়াছেন, যদিও শেষের দিক্‌টায় বিদেশী প্রভাবের ফলে ইহাঁদিগকে মাঝে মাঝে ইন্দ্রপুরীর পরী বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে।

 এই গল্পে অপ্সরাদের উত্তর-প্রত্যুত্তর-বঙ্গের সুপ্রাচীন গল্পমালার চিরপরিচিত বিহঙ্গম-বিহঙ্গমার উত্তর প্রত্যুত্তরেরই মত। বঙ্গদেশের এই ভাবের একটি রূপকথা: “Faithful John” নামে য়ুরোপে প্রচারিত হইয়াছিল। গ্রীম ভ্রাতৃদ্বয় তাহা প্রকাশ করিয়া আমাদের বিহঙ্গম বিহঙ্গমাকে পাশ্চাত্য রাজ্যে সুপরিচিত করিয়াছেন। আমার Folk Literature of Bengal নামক পুস্তকে এ সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা আছে।

 মধুমালার গল্পটি কাব্য হিসাবে বড় আসন পাইতে পারে না। যে হেতু দীর্ঘকাল যাবৎ ছেলেদের মনোরঞ্জনার্থ কথিত হওয়ার দরুণ ইহা কতকটা শিশুজগতের উপযোগী হইয়াছে। কিন্তু ইহার ভিত্তিতে যে একটা কবিত্বমূলক উচ্চ আদর্শ ছিল, তাহার নিদর্শন অনেক স্থলেই পাওয়া যাইবে। প্রেমের জন্য অপূর্ব্ব সহিষ্ণুতা ও ত্যাগ-যাহা কাঞ্চনমালা, কাজল রেখা ও মালঞ্চ মালার দৃষ্ট হয়—তাহার ছিটা ফোঁটা এই গল্পটির মধ্যেও আছে। পূর্ব্বোক্ত গল্পগুলির নারী চরিত্রের মত মধুমালার, প্রাণ-প্রতিষ্ঠা হয় নাই-আজগুবি অংশের উপর. উপাখ্যানে বেশী জোর দেওয়া হইয়াছে,—শিশুদিগকে ভুলাইবার জন্য। মধুমালা অন্ধ স্বামীর চক্ষুদান করিতেছেন, কিন্তু তিনি একটি সর্ত্তে আবদ্ধ। স্বামী যদি চক্ষু পাইয়া তাহার দিকে লুব্ধ দৃষ্টিতে চাহেন, তবে তিনি পুনরায় অন্ধ হইবেন, এবং সে অন্ধত্ব কিছুতেই ঘুচিবে না। প্রেমিকা জানিতেন—সকল প্রেমিকাই জানেন, চক্ষু পাইলেই নায়ক প্রেম-দৃষ্টিতে প্রেমিকার দিকে চাহিবেন—ইহা অকাট্য। যদি তিনি পূর্ব্বেই তাঁহাকে সাবধান করিয়াও ঔষধ প্রয়োগ করিতেন, তথাপি স্বামীর সেই ব্যাকুল