পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১০। নিজাম ডাকাতের পালা। ৩২১-৩৪৬ পৃঃ

 নিজাম ডাকাতের পালাটি আমাদের অন্যতম পালাসংগ্রাহক শ্রীযুক্ত আশুতোষ চৌধুরী মহাশয় চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান হইতে সংগ্রহ করিয়া ১৫।৭।২৫ তারিখে আমাকে পাঠান। এই পালার অধিকাংশ আশুতোষ বাবু চট্টগ্রামের বোলখালি থানার অন্তর্গত অল্লাগ্রাম নিবাসী সদর আলী গায়েনের নিকট হইতে সংগ্রহ করেন এবং মতিয়ার রহমান নামক একজন বাজীকরের নিকট হইতে অবশিষ্টাংশের উদ্ধার করেন। পালাটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্ব্বত্র প্রচলিত।

 পালারচয়িতার নাম জানা যায় নাই; নিজাম ডাকাত চতুর্দ্দশ শতাব্দীর লোক। সুতরাং তৎসম্বন্ধীয় পালা তাহার মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই রচিত হইবার কথা। কিন্তু বর্ত্তমান পালাটিতে পরবর্ত্তী কালের গায়কদিগের অনেক যোজনা রহিয়াছে।

 পালাটির কবিত্বসমৃদ্ধি বিশেষ কিছু নাই; কিন্তু তথাপি এই জাতীয় পালাগান ‘তন্ত্রীলয়সমন্বিত’-ভাবে গীত হইয়া সরলপ্রাণ শ্রোতৃবৃন্দের মধ্যে অকৃত্রিম করুণরসের সৃষ্টি করিয়া থাকে।

 ইহা বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করিবার বিষয় যে ধর্ম্ম সম্বন্ধীয় কোনও উপাখ্যান পালাগানের বর্ণনীয় বিষয় হইলে তাহাতে অতিপ্রাকৃত ব্যাপারের আতিশয্য দৃষ্ট হয়। হিন্দু ও মুসলমান উভয়শ্রেণীরই ধর্ম্মোপাখ্যান সম্বন্ধে একথা প্রযোজ্য; এই সমস্ত পালা ময়নামতীর গানের সহিত সমশ্রেণীর; মন্ত্রবলে অসাধ্যসাধন ও অতিমানুষিক ঘটনার সমাবেশ এই সমস্ত গানের বিশেষত্ব।

 সাধু বা পীরদের সম্বন্ধে অতিপ্রাকৃত ঘটনার অবতারণা ও তাঁহাদের প্রতি অলৌকিক শক্তিমত্তার আরোপ করার প্রথা প্রাচ্য ও প্রতীচ্য সমস্ত দেশেই প্রচলিত। পালাগানটি মুসলমান-রচিত হইলেও ইহার অনেক স্থলেই হিন্দুদিগের ধর্ম্মোপাখ্যানের সঙ্গে ঐক্য দেখা যায়। ইহার কারণ বোধ হয় এই যে ধর্ম্মজীবনের উচ্চস্তরে আরোহণ করিলে মানুষ সাম্প্রদায়িকতার গণ্ডীতে