পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০২
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

রাখে। এই যে সোনার গাছ দেখ্‌তাছ[১]; এই গুলাইন্‌ সব রাজকুমার। আইজ তুমি আইছ কাইল আমার গাছ অওন লাগব[২]। দিনে হে পুরীত থাকে না, রাজ্যের বাইরে খাইতে যায়। তার ফিরনের[৩] সময় অইয়া আইছে[৪]

 সন্ধ্যা হইতেই শুনে যে দূরে আশমানের দিকে একটা শব্দ অইতাছে[৫]। পরে এই জীনের পুরীত বাতাসের মত কি একটা উড়্যা আইল, তাতে অইল কি,—লীল পাথরের বাড়ী গুলাইন আর সোনার গাছ গুলাইন কাঁপতে লাগল। কতক্ষণ পরে দেখে একটা সুন্দর কন্যা তারা দুইজনের দিকে আইতাছে। তখন্ আইয়াই মধুমালারে লইয়া একটা মন্দিরের মধ্যে গেল। গিয়া তারে খুব ভালাভালা খাওনের জিনিষ দিল। দিয়া হে বাইর অইয়া গেল। মধুমালা তখন খেড়কীর দুয়ার দিয়া দেখে কি—যে হেই জীনডা একটা পুষ্কুণীর[৬] পারে গেল;—গিয়া জলের মধ্যে নামল। তখন জলের মধ্যে নাম্‌তেই একটা বোয়াল মাছ তার কাছে আইল। সে বোয়াল মাছটার পেটে হাত দিয়া একটা পাথর বাইর করল। হেই পাথরটা আগুনের মতন জ্বলে। এই পাথরটা লইয়া মদনকুমার যে মন্দিরে গেছিল্‌[৭], হেই মন্দিরে গেল। রাইত পোয়াইলে পরে মধুমালা জাগল। জাগ্যা দেখে হেই মন্দিরে মদনকুমার ও নাই, হেই কন্যাও নাই। দেখে কি হে একশ সোনার গাছের মধ্যে আরেকটা গাছ বেশী। তখন বুঝ্‌ত পারল যে এই গাছটাই তার স্বামী মদনকুমার। এই দেখ্যা হে খুব চিন্তিত অইয়া তার মন্দিরে ফিরা আস্যা বইয়া রইল[৮]। মনে করল যে বোয়াল মাছের পেটের পাথরটার মধ্যে নিরচয়[৯] কোনো গুণ আছে। এই মনে কইরা হে জলের মধ্যে গিয়া নাম্‌ল। নাম্‌লেই বোয়াল মাছটা তার কাছে আইল। হে কর্‌ল কি,—পেটের মধ্যে হাত দিয়া পাথরটা বাইর করল। পরে এই পাথরটা আন্যা গাছ গুলাইনে


  1. দেখতাছ=দেখিতেছ।
  2. অওন লাগব=হইতে হইবে।
  3. ফিরনের=ফিরিবার
  4. অইয়া আইছে=হইয়া আসিয়াছে। ‘হয়ে আস্‌ছে’।
  5. অইতাছে=হইতেছে।
  6. পুষ্কুণী=পুষ্করিণী।
  7. গেছিল্=গিয়াছিল
  8. ফিরা আস্যা বইয়া রইল=ফিরিয়া আসিয়া বসিয়া রহিল।
  9. নিরচয়=নিশ্চয়।