পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৪
পূর্ব্ব‌বঙ্গ গীতিকা

ছুওয়ায়, তা অইলে সব গুলাইন হাড়ই মানুষ অইব। এই কথা কইয়া তারা উড়্যা গেল (গা)। তখন পুরুষ বেশ ধইরা মধুমালা ডিঙ্গা কইরা রওনা অইল। যাইতে যাইতে হেই চৌমাথায় গিয়া উপস্থিত অইল। গিয়া দেখে যে, এক নালা দিয়া রক্তের সোত বইতাছে,—আর হাড়গুর, মাইনষের মাথা ভাইস্যা আইতাছে[১]। হে গিয়া রাক্ষসের পুরীত উপস্থিত অইল। গিয়া দেখে কি যে একটা সুন্দর কন্যা একটা সুন্দর রাজকুমারের হাত ধইরা বেড়াইতাছে। আর মানুষ গরুর বাতাসও নাই। মধুমালা মদনকুমাররে চিন্‌ল। আর বুঝল সে হেই কন্যাডাই রাক্ষসী। হেই রাক্ষসনীডা মধুমালারে পাইয়া খুব আদর কইরা এক মন্দিরে লইয়া গেল। হেই খান তারে খুব ভালা খাওন দিয়া বাইর অইয়া আইল। ঘুম থাক্যা উঠ্যা মধুমালা দেখল যে মদনকুমার আর নাই—বুঝত পার্‌ল যে তার সোয়ামীকেও রাক্ষসনী খাইয়া ফেল্‌ছে। কতক্ষণ পরে রাক্ষসনী[২] আইয়া মধুমালারে কইল যে তুমি আমারে বিয়া কর। মধুমালা কইল—আমায় একটা অশোজ্[৩] আছে। তিন দিন তেরাত্র পর তোমারে বিয়া করবাম্। রাক্ষসনী যখন খাওনের লাগ্যা রাজ্যের বাইরে গেল তখন মধুমালা এক খান ধারের তউরাল[৪] হাতে লইয়া যেদিকে রক্তের নদী হাড়ের পাড় আছে, হেই দিকে যাইতে লাগল। গিয়া দেখে রক্তের নদী হাড়ের পারের মধ্যে আসমান মঞ্চ জোরা[৫] এক অজাগর সাপ। হে তখন তউরাল দিয়া সাপটারে ছেও[৬] দিয়া ফাল্‌ল[৭]। তার রক্ত থাইক্যা মেলা অজগর বাইর অইতে লাগ্‌ল। আর হুনল কি সাঁ সাঁ কইরা একটা শব্দ অইতাছে। বোঝা যায় যেমন পিরথিমীডারে উল্ডাইয়াই ফালতাছে[৮]। তখন মধুমালা করল কি। বাঁয় কাট্যা[৯] ডাইনে মুছল, ডাইনে কাট্ট্যা বাঁয় মুছল, তার পরে অজাগ্‌গরডাও মইরা গেল। শব্দও


  1. ভাইস্যা আইতাছে=ভাসিয়া আসিতেছে।
  2. রাক্ষসনী=রাক্ষসী।
  3. অশোজ=অশৌচের অপভ্রংশ।
  4. তউরাল=তরোয়াল।
  5. আসমান মঞ্চজোরা=(সুদূর) আকাশ ও পৃথিবী জুড়িয়া।
  6. ছেও=(ছেদ হইতে) কাটিয়া ফেলা।
  7. ফাল্‌ল=ফেলিল।
  8. উল্ডাইয়া ফালতাছে=উল্‌টাইয়া ফেলিতেছে।
  9. কাইট্যা, কাট্ট্যা=কাটিয়া