পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা
৩১৫

মনেতে ভয় পেয়ে পশ্চিম মুয়ে অমনি গেল ফিরে।
পোররপুরে মোকাম কৈল গয়ারামের ঘরে॥
যত সব চেলের গোলা, ভাঙ্গিল তালা, সকল বা’র করিল।
মরাপেটে চড়া দিয়ে খিটন্ করিল[১]

তখন সিপাই-ঘেরা, সঙ্গীন চড়া, কাপ্তান সহিত।
নদীর উপান্তে আসি হৈল উপনীত॥
যত সব সিপাইগণে, ভাবে মনে, হয়ে সার সার।
দেখে শুনে মৌরক্ষির উপার না হয় পার॥
তীর বাঁশ তৈয়ার আছে, আপন সাজে, রণ নাইখ বাজে।
নদীর ধারে সাঁওতালরা নাগরা বাজায় নাচে॥
সেখানে সাধ্য কার, পারাপার, দুকূল বহে বান্।
হাতেতে কিরিচ ধ’রে দেখিছে কাপ্তান॥

দেখিয়ে বহুত সেনা, কি মন্ত্রণা, করে দুইজনে।
বন্দুক তৈয়ার রাখ, কহে সিপাইগণে॥
দণ্ড চারি ছয় পরে, কহে হাওয়ালদারে, সুবেদার প্রতি।
নির্ণয় করিতে দুর্পিণ[২] আন শীঘ্র গতি॥
ব’লে উঠ্‌ল গজে হাওদা মাঝে, নয়নে দুর্পিণ।
ঝুড়েঝাড়ে আছে সাঁওতাল ক্রোশ দুই তিন॥
কিছু দূর পিছা হাট, বলে ঝাট্, সাহেব গেল চ’লে।
পবন বেগে ধায় সাঁওতাল, পলাও পলাও ব’লে॥

করিয়ে বহু দম্ফ, দিল ঝম্প, পড়্‌লো নদীর জলে।
সাঁতারিয়ে পার হয় হাজার সাঁওতালে॥


  1. মরা পেটে····করিল=ক্ষুধার্ত্ত সাঁওতালেরা উদর পূরণ করিয়া আহার করিল। খিটন = ভূরি ভোজন। এখনও “খেট” শব্দ এতদ্দেশে প্রচলিত আছে।
  2. দুর্পিণ = দূরবীক্ষণ যন্ত্র।