পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৪৭

খানজাহান কর্ত্তৃক ধৃত ও নিহত হইলে তাঁহার বৃদ্ধা মাতা খান জাহানের কৃপাভিক্ষা করিয়া তাঁহার আশ্রয় গ্রহণ করেন। ইশা খাঁ তাঁহার অপর পুত্র হইলে এই বৃদ্ধা রমণী কি কখনও এইরূপ পুত্র-হন্তার শরণ লওয়ার হীনতা স্বীকার করিতেন? আইন-ই-আকবরীতে দাউদ খাঁর অনেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনের নামোল্লেখ আছে, কিন্তু তাহাতে ইশাখাঁর নাম নাই। উক্ত প্রখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থে ইশাখাঁর বংশাবলী, তাঁহার পিতার মৃত্যু, শৈশবে তাঁহার দাসরূপে বিক্রীত হওয়া এবং সেইরূপ হীনভাবে কিছু দিন তুরাণে অবস্থিতি প্রভৃতি বিবরণ পাওয়া যায়। আইন-ই-আকবরির এই বিবরণ পাঠে মনে হয়, ইশাখাঁর বাল্যেতিহাস অন্ধকারাচ্ছন্ন। পরে ইশাখাঁ কিরূপে সম্পদও ক্ষমতার অধিকারী হইলেন, তাহা অপর এক সূত্র হইতে জানা যায়।

 ত্রিপুরার রাজমালা গ্রন্থের প্রথম দিক্‌টা অর্থাৎ যেখানে চন্দ্রবংশীয় যযাতির সহিত ত্রিপুরার রাজবংশের সম্বন্ধ স্থাপন করিবার প্রয়াস হইয়াছে, সেই অংশটুকু বাদ দিলে তৎবর্ণিত অন্যান্য ইতিবৃত্তগুলির অধিকাংশই বিশ্বাসযোগ্য বলিয়াই মনে হয়। ইতিহাস-পূর্ব্ব যুগের বিবরণ কল্পনা মিশ্রিত হইলেও পরবর্ত্তীযুগের শাসনসংক্রান্ত ইতিবৃত্ত রাজসভার ঐতিহাসিকগণ যথাযথভাবে রক্ষা করিয়াছেন। অবশ্য তথাকার রাজন্যবর্গের বীরত্ব প্রতিপাদন করিবার জন্য ঐ পুস্তকে সময়ে সময়ে কাল্পনিক যুদ্ধবিগ্রহ ও জয়-লাভের কাহিনী প্রদত্ত হইয়াছে, কিন্তু তৎসত্ত্বেও পারিবারিক বংশাবলীর ধারা এবং প্রধান প্রধান ঘটনার ইতিাহস তাঁহারা নিশ্চয়ই অবিকৃত রাখিয়াছেন। সারাইল পরগণার ইশাখাঁর সম্রাট্ বাহিনীর সহিত যুদ্ধ-বৃত্তান্ত স্মরণীয় হইয়া রহিয়াছে। ইশাখাঁ যে কিছু কালের জন্য ত্রিপুর-রাজের সেনাপতি ছিলেন এবং তিনি রাজা অমরমাণিক্যের তুষ্টিসাধনের জন্য নানাবিধ প্রয়াস পাইতেন, ইহাতে সন্দেহ নাই। রাজমালার যে অংশে ইশাখাঁর বিবরণ আছে, আমরা পরে তাহার সক্ষিপ্ত বিবরণ দিব। ত্রিপুরারাজ ইশাখাঁকে ‘মসনদ আলি’ উপাধি প্রদান করিয়াছিলেন, রাজ-কবিদিগের এই উক্তি সম্বন্ধে আমাদের দ্বিধা থাকিলেও রাজমালা প্রদত্ত ইশা খাঁ সম্বন্ধীয় অন্যান্য বিবরণ যথার্থ বলিয়াই মনে হয়।

 জঙ্গলবাড়ীর দেওয়ানদিগের ইতিহাসগ্রন্থে অথবা পালাগানগুলির কোথায়ও ইশা খাঁর বাল্যেতিহাস দেওয়া হয় নাই। সমস্ত বিবরণেই ইশা খাঁ সুলেমান