পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

অবিশ্বাস্য বলিয়া গ্রহণ উড়াইয়া দিতে হয়, নতুবা প্রথমটিকে অপেক্ষাকৃত প্রামাণ্য বলিয়া গ্রহণ করিতে হয়; কারণ ইহার সপক্ষে আনুষঙ্গিক কতকগুলি প্রবাণ প্রদর্শিত হইয়াছে। তবে একথা অবিসম্বাদিত সত্য যে, কালিদাস গজদানী মুসলমান ধর্ম্ম গ্রহণ করেন এবং সুলেমান খাঁ নাম ধারণ করিয়া সমসাময়িক কোন মুসলমান নরপতির কন্যার পাণি গ্রহণ করেন। এই সম্বন্ধে তিনটি পালাগানে ও অপরাপর বিবরনী সমূহে ঐক্য দৃষ্ট হইতেছে, এ বিষয়ে আমরা পূর্ব্বেই লিখিয়াছি।

 বংশলতার এই বৈষম্য বাদ দিলে ‘মসনদ আলি ইতিহাস’ এবং অন্যান্য পালাগানগুলিতে ইশাখাঁর জীবনবৃত্তান্ত সম্বন্ধীয় অপরাপর প্রায় সমস্ত ঘটনার ঐক্য দেখা যায়। অবশ্য তাহাতে কবিকল্পনা এবং অবান্তর কথাও অনেকটা আছে। এই সমস্তের কোনটিতেই ঈশাখাঁর বাল্যজীবনী নাই। সুতরাং এ সম্বন্ধে আইন-ই-আকবরী ও রাজমালায় যে বিবরণ প্রদত্ত হইয়াছে তাহাই গ্রহণযোগ্য।

 অমর মাণিক্যের রাজত্বকালে ১৫৭৮ খ্রীঃ হইতে ত্রিপুরারাজ্যে ইশা খাঁ যাহা কিছু করিয়াছিলেন, আমরা তাহার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিতেছি; এই বিবরণ রাজমালা হইতে গ্রহণ করিলাম।

 ইশাখাঁ তুরাণ অঞ্চল হইতে প্রত্যাবর্ত্তনের অব্যবহিত পরেই যে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন, এরূপ মনে হয় না। তিনি প্রথমতঃ সৈন্যসংগ্রহ করিয়া ত্রিপুরা জেলার সারাইল পরগণায় অবস্থিতি করেন।

 অমর মাণিক্য ১৫০৪ শক অর্থাৎ ১৪৮২ খ্রীষ্টাব্দে উদয়পুর পাহাড়ের পশ্চিমে চৌদ্দগ্রামে “অমরদীঘি” নামক একটি প্রকাণ্ড দীঘিকা খনন করিয়া ছিলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি হরিশ্চন্দ্রের পুত্ত্র সুবুদ্ধিনারায়ণকে জিজ্ঞাসা করেন,—তাঁহার মিত্র ও সামন্ত ভূস্বামীদিগের মধ্যে কে খনন কার্য্যের জন্য কত জন কুলী দিয়া সাহায্য করিয়াছেন।

 সুবুদ্ধিনারায়ণ উত্তরে বলিলেন, “বিক্রমপুরের ভূম্যধিকারী চাঁদরায় সাতশত কুলী দিয়াছেন; তাঁহার লোকেরা পরিশ্রমী ও সুচতুর। বাক্‌লা পরগণার বসু সাতশত এবং ভাওয়ালের রাজা এক হাজার লোক দিয়াছেন। অষ্টগ্রাম হইতে পাঁচ শত এবং শ্রীহট্ট বাণিয়াচং হইতে আমরা আট শত মজুর