পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৫৭

প্রমাণিত হইতেছে, তখন মনে হয়, এই রাজকুমারীর প্রতি অনুরাগই তাঁহার ধর্ম্মান্তর গ্রহণের প্রধান কারণ। তিনি পুর্ব্বে একজন নিষ্ঠাবান্ হিন্দু ছিলেন এবং প্রত্যহ একটি করিয়া স্বর্ণ-হস্তী ব্রাহ্মণকে দান করিয়া ‘গজদানী’ উপাধি লাভ করেন, (হস্তীটি অবশ্য জীবন্ত হস্তীর অনুকরণে ক্ষুদ্রায়তন করিয়া নির্ম্মিত হইত) এইরূপ আচারপরায়ণ একজন হিন্দু যে রাজমন্ত্রীর ধর্ম্মব্যাখ্যাশ্রবণে স্বধর্ম্ম পরিত্যাগ করিয়াছিলেন, একথা বিশ্বাস করিতে প্রবৃত্তি হয় না; বিশেষতঃ ধর্ম্মব্যাখ্যাতা মন্ত্রিপ্রবর পীর-পয়গম্বর শ্রেণীর কেহ ছিলেন না। ইতিহাসের অনেক স্থলেই দেখা যায়, কামদেব ধর্ম্মযাজকদের দক্ষিণ হস্ত ও অগ্রদূত, সুতরাং তাঁহারই অমোঘ শরবিদ্ধ হইয়াই যে গজদানী ইসলাম ধর্ম্ম গ্রহণ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন, এই অনুমানই অধিকতর সঙ্গত বলিয়া মনে হয়! দেওয়ান পরিবারের কাগজপত্রে গজদানীর ধর্ম্মত্যাগের যে কারণ প্রদর্শিত হইয়াছে, তাহারও একটি উদ্দেশ্য থাকিতে পারে। যাহাতে পারিবারিক মর্য্যাদার হানি হয়, অথবা যে বিবরণ কোনরূপ কুৎসা বা গ্লানিজনক হয়, তাহা অপ্রকাশিত রাখিবার অথবা পরিবর্তিত আকারে প্রচার করিবার চেষ্টা স্বাভাবিক। অপরপক্ষে, পালাগান সমূহে প্রদত্ত বিবরণের বিরুদ্ধেও ইহা বলা চলে যে পালা-রচয়িতারা সুবিধা পাইলেই আখ্যানভাগের মধ্যে প্রেমের কাহিনী ঢুকাইয়া দিয়া থাকেন। আমরা দুইটি মতেরই সপক্ষে এবং বিরুদ্ধে এইমাত্র বলিয়া প্রকৃত ব্যাপার নির্ণয়ের ভার পাঠকের বিচার বুদ্ধির উপর দিতেছি। জঙ্গলবাড়ীর দেওয়ানেরা একসময়ে পূর্ববঙ্গ অঞ্চলে অত্যন্ত প্রতিপত্তিশালী হইয়া উঠিয়াছিলেন। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও উত্তরপশ্চিমাগত গোঁড়া মুসলমানেরা দেওয়ান পরিবারকে ততটা শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিতেন না। দেওয়ান ফিরোজ খাঁর পালায় আছে, কেল্লাতাজপুরের রাজকন্যার সহিত ফিরোজ খাঁ বিবাহ প্রস্তাব প্রেরণ করিলে উক্ত কন্যার পিতা ওমর খাঁ অবজ্ঞা সহকারে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন। ওমর খাঁ জঙ্গলবাড়ীর দেওয়ান পরিবারকে কাফের ও হিন্দুভাবাপন্ন বলিতেন, এবং তাঁহাদিগের ধমণীতে হিন্দু শোণিত প্রবাহিত ছিল বলিয়াই তাঁহাদিগকে ঘৃণা করিতেন।

 পালাগানে কেদার রায়ের কন্যার নাম সুভদ্রা বলিয়া উল্লিখিত কিন্তু হিন্দু দিগের সংস্কার অনুসারে ঐ কন্যা সোণা অথবা সোণামণি নামে পরিচিতা হইয়া