পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৫৯

পুত্ত্রদ্বয় হইতে উৎপন্ন।[১] এই বিবরণ কতদূর সত্য, জানি না। গোঁড়া মুসলমান লেখক একটি সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারকে হিন্দু সংস্রবদুষ্ট বলিয়া স্বীকার করিতে না চাহিতে পারেন; এই জন্যই হয়ত দেওয়ান পরিবারের বংশতালিক। হইতে কায়স্থ রাজকন্যার নামগন্ধ পর্য্যন্ত উঠাইয়া দেওয়ার চেষ্টা হইয়াছে। জাহাঙ্গীর যে যোধবাঈয়ের গর্ভজাত সন্তান, ইহা সকলেই জানেন। ভারতেতিহাসে বিশিষ্ট মুসলমান পরিবারের মধ্যে এরূপ হিন্দুর সহিত বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপনের দৃষ্টান্ত বিরল নহে। কিন্তু দিল্লী-সম্রাট নিন্দাসমালোচনার অনেক উপরে; তাঁহার পক্ষে হিন্দু সংস্পর্শে কোন দোষ ঘটিতে না পারে। বিশেষতঃ, যে কথা অবিসম্বাদিত ঐতিহাসিক সত্য, তাহা না মানিয়া উপায় কি? কিন্তু অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র পরিবারের পক্ষে এরূপ বিধর্ম্মীর সহিত সম্বন্ধ অস্বীকার করিবার চেষ্টা স্বাভাবিক। হিন্দুরমণী হইতে উৎপন্ন মুসলমান ওমরাহেরা তাঁহাদের সমাজে একটু হেয় হইয়া পড়িতেন। কিন্তু দেওয়ান পরিবারের বিভিন্ন শাখার মধ্যে কোন্ শাখা কখন শ্রীপুরের রাজকন্যার নাম ইচ্ছাপূর্ব্বক লোপ করিয়া দিয়াছেন, তাহার কোনও সন্ধান আমরা দিতে পারিতেছি না। হৈবৎপুরের শাখা সোণামণির সহিত সম্বন্ধগ্রথিত, দুর্গাচরণ সান্ন্যাল মহাশয়ের এই কথা আমরা মানিয়া লইতে পারিতেছি না; কারণ সান্ন্যাল মহাশয় তাঁহার মতের পরিপোষক কোনও প্রমাণ প্রয়োগ করেন নাই। ওয়াইজ সাহেব লিখিয়াছেন যে, ত্রিপুরার হরিশপুরে দেওয়ানদিগের যে শাখা আছে, তাহাতে জমিদারের জ্যেষ্ঠপুত্রের নামের সহিত “ঠাকুর” উপাধি যোগ করিবার প্রথা আছে। ইহাতে মনে হয়, এই পরিবারে হিন্দু-প্রভাবান্বিত। ইহাও বলা আবশ্যক যে, বঙ্গদেশে “ঠাকুর” উপাধি শুধু ব্রাহ্মণদিগেরই একচেটিয়া নহে, কায়স্থ এবং অন্যান্য দুই একটি উচ্চ জাতিও ইহা ব্যবহার করিয়া থাকেন। এই উপাধির সহিত রাজকন্যা সোণাইর কোনও সম্বন্ধ আছে কিনা,

  1. মুদ্রিত সংস্করণে “সাহবৎপুর” লিখিত। কিন্তু লেখক আমাকে যে কাপি উপহার দিয়াছেন, তাহাতে স্বহস্তে “সাহবৎপুর” কাটিয়া “হৈবৎপুর” লিখিয়া দিয়াছেন। সান্ন্যালের ইতিহাস, ৪৪৩ পৃঃ)।