পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

 দেওয়ানদিগের প্রদত্ত বিবরণে পাওয়া যায় যে, মানসিংহের পত্নী সাশ্রুনেত্রে ইশাখাঁকে তাঁহার স্বামীর সহিত দিল্লী যাইতে অনুরোধ করিয়াছিলেন। তাহার কারণ এই যে ইশাখাঁ যাইতে সম্মত না হইলে সম্রাটের হস্তে মানসিংহের শিরশ্ছেদ অপরিহার্য্য। ইহাতে মানসিংহের পত্নীর প্রতি কারুণ্য বশতঃ সমাটের ক্রোধ হইতে মানসিংহকে রক্ষা করিবার জন্য ইশাখাঁ বন্দিভাবে দিল্লী যাইতে স্বীকৃত হইয়া স্বেচ্ছায় কারাবাস বরণ করিয়া লইলেন। এই বিবরণ দ্বারা সেনাপতি মানসিংহকে অপদার্থ প্রতিপন্ন করিয়া ইশাখাঁর মহানুভবতা ও বীরত্ব প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা হইয়াছে। ডাক্তার ওয়াইজ এই গল্পে বিশ্বাস করিয়াছেন। কিন্তু একজন মুসলমান পালারচয়িতা এই ঘটনার ভিন্ন রূপ বিবরণ দিয়াছেন এবং তাঁহাই বিশ্বাসযোগ্য বলিয়া মনে হয়। তাহাতে মানসিংহকে খাট না করিয়া ইশাখাঁকে বড় করা হইয়াছে। উক্ত পালায় কথিত হইয়াছে যে, ইশাখাঁ এগারসিন্দুরের দুর্গে প্রবেশ করিয়া মানসিংহের আক্রমণ হইতে আত্মরক্ষা করেন। মানসিংহ ইশাখাঁকে বন্দী করিবার জন্য যে সমস্ত কৌশল প্রয়োগ করেন, পালাগানে সে বিবরণও পাওয়া যায়। এই বিবরণটিতে মানসিংহ বা ইশাখাঁ কাহারও গৌরবহানি না করিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে উভয়ের কৃতিত্ব প্রদর্শন দেখান হইয়াছে। পরিশেষে ইশাখাঁর দিল্লী কারাগার হইতে মুক্তি এবং গুণগ্রাহী মানসিংহের অনুরোধে ইশাখাঁর প্রতি সমাটের সম্মান প্রদর্শনের কথাও প্রদত্ত হইয়াছে।

 ইশাখাঁকে ছাড়া অপর একজন ভূঞার কথাও প্রাসঙ্গিক ভাবে এই পালাগানটিতে আছে। কোন কোন ঐতিহাসিক লিখিয়াছেন যে কেদার রায় মানসিংহের সহিত যুদ্ধকালে একটি আঘাত প্রাপ্ত হন এবং তাহার ফলে তাঁহার