পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

মুসলমানী আমলের পূর্ব্বেকার—বৌদ্ধযুগের শিল্পেরও স্পষ্ট নিদর্শন ছিল। ওয়াইজ সাহেব কেদার রায়কে উহার স্থাপন-কর্ত্তা বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়া লিখিতেছেন—“দেওয়াল গুলি এগার ইঞ্চি পুরু, এবং সেই সময়কার মুসলমানী আমলের এমারৎসমূহের দেওয়াল অপেক্ষা বৃহত্তর।” এই সুদৃঢ় দেওয়ালগুলি ইস্‌লাম-যুগের পূর্ব্ববর্ত্তী বলিয়া মনে হয়; এবং মন্দিরের সামনে “কেশবের মার দীঘি” বলিয়া যে প্রকাণ্ড জলাশয় দৃষ্ট হয়, উহাতে বোধ হয় উক্ত নামের কোন মহিলার আদেশেই দীঘি ও মন্দির উভয়ই প্রস্তুত হইয়াছিল। একটি গ্রাম্য প্রবাদের উপর নির্ভর করিয়া ওরাইজ সাহেব লিখিয়াছেন, উক্ত দীঘি কেদাররায়ের জনৈক দাসীকর্ত্তৃক নির্ম্মিত হইয়াছিল। একথা আমরা গ্রহণ করিতে পারিনা। মন্দির এবং তৎসংলগ্ন দীঘি সাধারণতঃ একই ব্যক্তির দ্বারা নির্ম্মিত হইয়া থাকে। “কেশোর মা” কথাটার মধ্যে হয়ত একটা নিম্ন শ্রেণীর গন্ধ পাইয়া তাঁহারা ঐরূপ প্রবাদ রচনা করিয়া থাকিবেন। কিন্তু পূর্ব্বকালে সকল শ্রেণীর লোকেরাই প্রাকৃত নামে অভিহিত হইতেন; তখনও শুদ্ধ সংস্কৃত শব্দের দেশময় প্রচলন হয় নাই। আমার অনুমান, মন্দিরটি বৌদ্ধযুগের। চাদঁরায় এবং কেদার রায় উহার সংস্কার সাধন করিয়া সম্ভবতঃ উহাতে নিজেদের নাম সংযোগ করিয়া থাকিবেন। মন্দিরের নির্ম্মাণ কৌশল এবং স্থাপত্যের বিশেষজ্ঞ অনুসারে আমরা এইরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছি। এই মন্দিরের ধ্বংসে পূর্ব্ববঙ্গে বৌদ্ধযুগের একটি বিশিষ্ট স্থাপত্যকীর্ত্তি লুপ্ত হইয়াছে।

 কথিত আছে আকবরের রাজত্বকালে বঙ্গদেশ জরিপ হওয়ার পর ইশাখাঁ পূর্ব্ববঙ্গে বাইশটি পরগণা দখল করেন। পালা গানটিতে এই পরগণাগুলির নাম দেখিতে পাওয়া যায়। দেওয়ানপরিবারের আদি-নিবাস অযোধ্যা জেলার বাইশওয়ারী নামক স্থান বলিয়া উক্ত হইয়াছে। স্টেপল্‌টন বলেন, “বাইশ” এবং “য়ারা” “ও” অক্ষরের উভয় পার্শ্বে ফাঁক না দিয়া লিখিত হইয়া বাইশওয়ারায় পরিণত হইয়াছে। রাজপুতাধিকৃত বাইশটি পরগণার সহিত বাইশওয়ারা নামের সম্বন্ধ আছে। ইশাখাঁ যে পূর্ব্ববঙ্গে বাইশটি পরগণার আধিপত্য লাভ করেন, এই কথাটিও বাইশওয়ারা রাজপুতবংশের পূর্ব্ব বৈভবের চিরাগত সংস্কারের আভাস প্রদান করিতেছে।