পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৬৭

 পালাগানগুলিতে ষোড়শ শতাব্দীতে প্রচলিত পূর্ব্ববঙ্গের আচার ব্যবহার যথাযথভাবে প্রদত্ত হইয়াছে। সেই যুগে মৈমনসিংহে যে সমস্ত “বাঙ্গালা” ঘর নির্ম্মিত হইত, তাহার বিস্তৃত বিবরণ এই গানগুলির অনেক স্থলেই পাওয়া যায়। ময়ুর, সারস ও মাছরাঙ্গা পাখীর পালকে ছাদগুলি সাজান হইত, আমীর ওমরাহদিগের প্রাসাদের স্ফটিকের স্তম্ভ নির্ম্মাণ করা একটা প্রথা হইয়া দাঁড়াইয়াছিল। মজলিস্ জেলালের প্রাসাদ সমূহের দেউড়িতে এখনও সেইরূপ স্তম্ভ গুলির ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়। বড় বড় নৌকাকে “কোশা” বলা হইত, পালায় ইহার উল্লেখ পাই। “কোশা” নাম এখনও প্রচলিত আছে। পালা-গানগুলিতে কথিত হইয়াছে যে যুদ্ধে ব্যবহৃত নৌশ্রেণীর বহর এক ক্রোশ পর্য্যন্ত বিস্তৃত থাকিত। অবশ্য ইশাখাঁর “কোশা” খুব বড় হইলেও, অতি প্রাচীন কালের হিন্দুদিগের বিপুলায়তন ডিঙ্গার মত ছিল না। প্রাচীন কালে খুব বড় ডিঙ্গা তৈয়ারী হইত। বাবিলন ও মিসরবাসিগণ সুবৃহৎ সৌধনির্ম্মাণে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন; ভারতবর্ষেও বহুদিন পর্য্যন্ত বিশাল সৌধ ও প্রকাণ্ড মূর্তি নির্ম্মাণের প্রথা প্রচলিত ছিল। চৈনিক পরিব্রাজক হুয়েন সাং উত্তর ভারতে অক্টারলোনি মনুমেণ্টের মত উচ্চ, অতিকায় বুদ্ধমূর্ত্তি দেখিয়া গিয়াছিলেন; সে ত মাত্র সপ্তম শতাব্দীর কথা।

 পালাগানে পাইতেছি, উচ্চপদস্থ মুসলমান মহিলাগণ পার্সী সাড়ী পরিতেন এবং সম্ভ্রান্ত মুসলমান যুবকেরা মিশরে প্রস্তুত জামা পছন্দ করিতেন। তাঁহারা আরবের টুপী এবং পার্সী শিল্পিনির্ম্মিত মণিমুক্তা খচিত পাদুকা ব্যবহার করিতেন।

 ওয়াইজ সাহেব জঙ্গলবাড়ী দেওয়ান পরিবারে রক্ষিত তিনটি সনদের উল্লেখ করিয়াছেন।

 প্রথমটি সাহসুজা প্রদত্ত, উহার তারিখ ২১ জুলাস, সন ১০৭ সাহজাহান অর্থাৎ ১৬৪৭ খ্রীঃ। ইহাতে দেওয়ান পরিবারের আহম্মদ ও ইওয়ার মহম্মদ উভয়কে এক সহযোগে ইৎকুইদ খাঁর নিকট সরকারের রাজস্ব প্রদান করিবার আদেশ প্রদত্ত হইয়াছে। ইহাতে

 দ্বিতীয় সনদের কাল ১০৫৯ হিজয়ী অর্থাৎ ১৬৪৯ খৃঃ। ইহাতে রাজকীয় মনসবদার এবং অন্যান্য কর্ম্মচারিদিগের উপর সরকারের নির্ম্মিত