পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৭৩

প্রচলিত নামান্তর থাকিতে পারে এবং কবির পক্ষে সরকারী কাগজপত্রে ব্যবহৃত অপেক্ষাকৃত বড় নামগুলি বর্জ্জন করিয়া সহজ ডাকনাম ব্যবহার করা ও অসম্ভব নহে।

 শ্রীহট্টজেলার মৈনা-কানাইবাজার নিবাসী পণ্ডিত শ্রীযুক্ত অচ্যুতচরণ তত্ত্বনিধি মহাশয়কে আমি এ সম্বন্ধে লিখিয়াছিলাম; শ্রীহট্টের ইতিহাস সম্বন্ধে তাঁহার উক্তিই অনেকটা প্রামাণ্য—তিনিই এখন এক্ষেত্রে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। বাঙ্গালা ১৩২৯ সালের ১লা অগ্রহায়ণ তত্ত্বনিধি মহাশয় আমার প্রশ্নের জবাবে যে চিঠি দিয়াছিলেন, তাহার কিয়দংশের মর্ম্ম নিম্নে প্রদান করিতেছি।

 “বাণিয়াচঙ্গের আলাল-দুলালকে দিয়া আপনি কি করিবেন? শ্রীহট্টের ইতিহাস সম্বন্ধে আমার গ্রন্থ চার খণ্ডে দুই হাজার পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হইয়াছে। এই গ্রন্থে বাণিয়াচঙ্গের সব কথাই আছে। তবে দেওয়ানদিগের বংশলতায় আলাল-দুলালের নাম নাই। বর্ত্তমান দেওয়ানেরা এসম্বন্ধে কোনও তথ্য দিতে পারেন নাই। ‘আলাল-দুলাল’ নাম দুটি হিন্দু ঘরেরও হইতে পারে। অত্যধিক প্রশ্রয়-প্রাপ্ত ছেলেকে পল্লী গ্রামে “আলালের ঘরের দুলাল” বলিয়া থাকে। সুতরাং ইহাও সম্ভব হইতে পারে, উক্ত নামধারী দেওয়ানদ্বয় বাল্যকালে পিতামাতার অতিরিক্ত আদুরে ছিলেন বলিয়া ‘আলাল-দুলাল’ নামে পরিচিত হইয়াছিলেন। আমার মনে হয় জামাল খাঁ ও কামাল খাঁই সাধারণের নিকট এই নামে পরিচিত ছিলেন। ১৭৪৯ খ্রীষ্টাব্দের একটি দলিলে আদম খাঁর নাম পাওয়া যায়, কিন্তু এই নামে কোনও দেওয়ান ছিলেন, বংশলতায় তাহার আভাস নাই। এই সময়ে যে দুইজন দেওয়ান জীবিত ছিলেন, তাঁহাদের নাম আহম্মদ খাঁ ও মামুদ খাঁ। এই আহম্মদ খাঁরই নামান্তর আদম খাঁ হইবে।

 “জামাল খাঁ ও কামাল খাঁ আলাল-দুলাল নামে পরিচিত ছিলেন, এই সিদ্ধান্তের অপর একটি প্রমাণ মিলিতেছে। এখানে একটি প্রবাদ আছে যে এই দেওয়ানদ্বয় দুবরাজ নামক দক্ষিণভাগের এক রাজার সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন। দক্ষিণভাগ নামটি এই সময়েরই সৃষ্টি। এই স্থান আসামবেঙ্গল রেলওয়ের একটি স্টেশন—শ্রীহট্ট হইতে তের মাইল দূরে অবস্থিত। বদরপুর হইতে ইহার দূরত্ব প্রায় ৩৬ মাইল এবং রেলওয়ে লাইনের পশ্চিম সীমান্ত