পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৭৭

ওস্তাদ, দুনিয়া, আস্‌মান, জমিন্‌, আছান, আখের, দরিয়া, বেইমান, বেইজ্জত ইত্যাদি। পালাগানে এইরূপ অসংখ্য শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে। এ সম্বন্ধে “মৈমনসিংহগীতিকা” প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় আমরা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করিয়াছি।

 এসম্বন্ধে আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করিবার আছে। বর্ত্তমান পালার অন্ধ কবি এবং নিরক্ষর গায়ক সম্প্রদায় স্বাভাবিক উচ্চারণ বজায় রাখিয়া কথ্যভাষায় ব্যবহৃত শব্দগুলি প্রয়োগ করিয়াছেন। ভাষাতত্ত্ববিদ্‌গণ এ বিষয়টি লক্ষ্য করিতে পারেন। শব্দের লিখিত আকৃতির সহিত অন্ধ অথবা নিরক্ষর কবিগণের পরিচয় না থাকার দরুণ তাঁহারা শুধু শ্রুতিশক্তির দ্বারা শব্দের ধ্বনি উপলব্ধি করেন, এবং প্রয়োগকালে অবিকল তাহাই ব্যবহার করেন। এইজন্যই বর্ত্তমান পালা-রচক অন্ধ কবি শব্দের কথ্যভাষায় ব্যবহৃত উচ্চারণ বজায় রাখিয়াছেন এবং নিরক্ষর গায়েনেরাও কবির ব্যবহৃত কথিতভাষা অবিকৃত ভাবে রক্ষা করিয়া কবির কথাতেই পালাগানগুলি গাহিয়া গিয়াছেন। যে ক্ষেত্রে পালা-রচকের সামান্য পরিমাণেও অক্ষর-বোধ থাকিত, সে স্থানে তৎকর্ত্তৃক লিখিত ভাষার অনুযায়ী উচ্চারণ অনুসরণ করিবার প্রয়াস করা স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে নিরক্ষর অন্ধ কবি ও নিরভিমান মূর্খ গায়েনের হাতে স্বাভাবিক উচ্চারণের বিকৃতি ঘটে নাই। সুতরাং পালাগানে “ছোট”কে “ছুডু”, “প্রজা”কে “পরজা”, “চাঁদ”কে “চান্‌”, “হইবে”কে “অইব”, “শোন”, “শোক”, “সভা” ও “সাহেব”কে যথাক্রমে “ছোন”, “ছোক”, “ছভা”, “ছাহেব”, “দুঃখু”কে “দুষ্কু”, “বৃদ্ধ”কে “বির্দ্ধ”, “সূর্য্য”কে “সুরুজ”—ইত্যাদি আকৃতিতে ব্যবহার করা হইয়াছে।

 চন্দ্রকুমারের সংগৃহীত অন্যান্য পালাগানের তুলনায় এই পালাটি কবিত্ব সমৃদ্ধিতে গণনীয় নহে। বর্ণনাগুলি কৌতূহলপ্রদ হইলেও পালার কোথায়ও বর্ণনা-মাধুরী ও সরলতা নাই। পালায় বহুল পরিমাণে কথ্যভাষার প্রয়োগ করিলেও স্থানে স্থানে, বিশেষতঃ নারীগণের সৌন্দর্য্যবর্ণনা প্রসঙ্গে কবি সংস্কৃতশব্দের উৎকট অনুকরণের দ্বারা পাণ্ডিত্যপ্রকাশের লোভ সংবরণ করিতে পারেন নাই। কিন্তু কবির সংস্কৃত শব্দতন্ত্রে আদৌ অধিকার না থাকায় ভাষা অনেক স্থলে হাস্যোদ্দীপক হইয়া পড়িয়াছে। “মহুয়া”