পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

২। মইষাল বন্ধু। (২৯―৭৮, পৃঃ)

 ‘মইষাল বন্ধু’র দুইটি পালাই চন্দ্রকুমারের অসম্পূর্ণ সংগ্রহ। প্রথম পালাটি সূত্রকোণাগ্রামের চন্দ্রকুমার সরকার, কুল্লার আব্বাস নামক রায়ের বাজারের একজন গাড়োয়ান এবং সোহাগীগ্রামের নিধু ব্যাপারী নামক একজন পাট-ব্যবসায়ীর নিকট হইতে সংগৃহীত। দ্বিতীয় পালাটি ভাওয়াল পরগণার উছিগ্রাম নিবাসী গয়া নামক একজন নমঃশূদ্র, উক্ত গ্রামবাসী মাঝিয়া সেক নামক জনৈক ব্যক্তি এবং কাটঘরা গ্রামের গাছুনী সেখ নামক অপর একজন মুসলমানের নিকট হইতে সংগ্রহ করা হয়। প্রথম পালাটি ইংরেজী ১৯২৩ সালের ৭ই নবেম্বর তারিখে এবং দ্বিতীয়টি ১৯২৪ সালের ৭ই জানুয়ারী তারিখে আমি পাইয়াছি।

 মহিষরক্ষক ডিঙ্গাধর ও সুজাতী কন্যার অনুরাগকাহিনী অবলম্বনে মইষাল বন্ধুর দুইটি পালাই রচিত। কিন্তু পালা দুইটির বর্ণিত ঘটনার মধ্যে বিস্তর অনৈক্য আছে। অবস্থা-বিপর্য্যয়ে ডিঙ্গাধরের পিতাকর্ত্তৃক বলরামের নিকট হইতে ঋণগ্রহণ, ঋণগ্রহণানন্তর তাহার আকস্মিক মৃত্যু এবং তার পর নিঃসহায় ডিঙ্গাধরের পিতৃঋণ পরিশোধের জন্য বলরামের গৃহে চাকুরী-গ্রহণ পর্য্যন্ত আখ্যান ভাগ দ্বিতীয় পালাটিতে নাই। মঘুয়ার অনুপস্থিতিকালে মইষাল কর্ত্তৃক মঘুয়া-ভগিনী ময়নার পাণিগ্রহণ, দেশপ্রত্যাবৃত্ত মঘুয়ার কাঙ্গুরাজার নিকট বিচার প্রার্থণা এবং কাঙ্গুরাজা কর্ত্তৃক মইষালের প্রতি শূলের আদেশ―দ্বিতীয় পালার বর্ণিত এই উপাখ্যানাংশ প্রথম পালায় নাই। প্রথম পালায় আমরা মইষালের যে পিতৃবৃত্তান্ত পাই, তাহা মূল উপাখ্যানের সহিত সম্বন্ধহীন হইলেও উহার অবতারণা নিতান্ত উদ্দেশ্যহীন এবং ব্যর্থ হয় নাই। সঙ্গতিসম্পন্ন ‘সুজন’ গৃহস্থের অদৃষ্টবিড়ম্বনায় বিত্তনাশ এবং আকস্মিক মৃত্যু গ্রাম্য কৃষকজীবনের বিচিত্রতার চিত্র সুস্পষ্ট করিয়া দেখাইতেছে। পিতৃঋণের চিন্তায় আকুল, মলিনবেশী উপবাসী ডিঙ্গাধর একদিন বলরামের গৃহে উপস্থিত হইয়া যখন নিজের দৈন্য। নিবেদন করিয়া সুদীর্ঘ ছয়বৎসরের জন্য মহিষের রাখালী করিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ