পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভূমিকা
৮৩

উৎফুল্লহৃদয়া সখিনাকে দরিয়া সঙ্কোচ ও দ্বিধার সঙ্গে যুদ্ধসম্বন্ধীয় নিষ্টুর সংবাদটি প্রদান করিয়া অভিভূত করিয়া ফেলিয়াছিল। পরক্ষণেই সখিনা সাম্রাজ্ঞীর মত ধৈর্য্য সহকারে স্বামীর বন্দীদশার প্রতিশোধকল্পে পুরুষের পরিচ্ছদ ধারণ পূর্ব্বক তিন দিন অবিরাম যুদ্ধ করিয়া যে অলৌকিক শৌর্য্যপ্রদর্শন করিয়াছিলেন, তাহা শুধু তাঁহার বীরত্বের নহে পরন্তু রমনীহৃদয়ে প্রেমের অমোঘ-শক্তির নিদর্শন। নারীর হৃদয় যতই দৃঢ় হউক না কেন, তাহার একটি স্থান এমন সুকোমল যাহা কুসুমের মৃদু আঘাতটি পর্য্যন্ত সহ্য করিতে পারে না। স্বামীকে উদ্ধার করিবার পণ করিয়া তিনি শত্রুর আগ্নেয়াস্ত্রের সম্মুখীন হইয়া সিংহীর ন্যায় বিক্রমে রাত্রিদিন অবিরাম যুদ্ধ করিয়াছিলেন, কিন্তু স্বামী শত্রুর সঙ্গে সন্ধি করিয়া তাঁহাকে বর্জ্জন করিয়াছেন, এই সংবাদ বহন করিয়া দূত যখন তাঁহার হস্তে সেই তালাক্‌নামাটি এবং সন্ধিপত্র প্রদান করিল, তখন বীরাঙ্গনার হৃদয়ের সেই কুসুমকোমল স্থানটিতে যে আঘাত লাগিল, তাহা তিনি সহ্য করিতে পারিলেন না। মুহূর্ত্তমাত্র স্তব্ধ থাকিয়া যেন অবিশ্বাসের চক্ষে স্বামীর নামমুদ্রাঙ্কিত বর্জ্জনপত্রের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া ভগ্নহৃদয়া সখিনা সংজ্ঞাশূন্যা হইয়া ভূতলে পতিত হইলেন। তাঁহার পুরুষের ছদ্মবেশ অঙ্গ হইতে খসিয়া পড়িল পড়িল, এবং দৃঢ়বদ্ধ কেশপাশ মুক্ত ও আলুলায়িত হইয়া তাঁহাকে চিনাইয়া দিল। তখন রাজ্ঞী আর জীবিত ছিলেন না।

 পালাগানটিতে সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগের ঘটনা বর্ণিত হইয়াছে; সুতরাং উহার রচনার কাল তাহার অব্যবহিত পরেই হইবে বলিয়া মনে হয়।