পাতা:পুর্ব্ববঙ্গ গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড দ্বিতীয় সংখ্যা) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকা

চরণে বঁধু শতেক পরণাম। তোমার চরণে বঁধু লিখো আমার নাম॥ লিখিতে দাসীর নাম লাগে যদি পায়। মাটিতে লিখিয়া নাম চরণ দিও তায়॥” চণ্ডীদাসের সুবিখ্যাত “সুখের লাগিয়া, এঘর বাঁধিনু, অনলে পুড়িয়া গেল। অমিয়াসাগরে, সিনান করিতে সকলি গরল ভেল”।—পদটির সঙ্গে “ভেলুয়ার” নিম্নলিখিত ছত্রগুলি পড়ুন। এখানে ভাষা ও উপমার অবিকল ঐক্য নাই, কিন্তু ভাব একরূপ। “গাছের তলায় আইলাম ছায়া পাইবার আশে। পত্র ছেইদ্যা রৌদ্র লাগে আপন কর্ম্ম দোষে॥ ঘরেতে পাতিলাম শয্যা নিদ্রার কারণ, সেই ঘরে লাগিল আগুন কপালে লিখন” (৯।৬৩-৬৬)। “বেড়ায় খাইল ক্ষেত আপন কর্ম্মদোষে” (ভেলুয়া ৯।৬)। “ধোপার পাটের” (২।৯-১৬) পদটি পড়ুন,—রাজকুমার ঝঞ্ঝাবৃষ্টি সহ্য করিয়া রজক-কুমারীর জন্য তাহার গৃহের আঙ্গিনায় অপেক্ষা করিতেছেন; অথচ সে তাঁহাকে ইঙ্গিত করিয়া ডাকিয়া আনিয়া জাগ্রত পিতামাতার চক্ষু এড়াইয়া বাহিরে যাইতে পারিতেছে না। পল্লীগীতিকার এই আলেখ্যটির উৎকৃষ্ট টিপ্পনী করিয়াছেন চণ্ডীদাস:—“এ ঘোর রজনী, মেঘের ঘটা, কেমনে আইলা বাটে। আঙ্গিনার মাঝে, বঁধুয়া ভিজিছে, দেখে যে পরাণ ফাটে॥ ঘরে গুরুজন, ননদী দারুণ, বিলম্বে বাহির হনু। আহা মরি মরি, সঙ্কেত করিয়া, কত না যাতনা দিনু॥” “ধোপার পাটের”—“কাট্যা গেছে কাল মেঘ চাঁদের উদয়। এই পথে যাইতে গেলে কুলমানের ভয়॥” (২।১৮) পড়িলে চণ্ডীদাসের “কহিও বঁধুরে সখি কহিও বঁধুরে। গমন বিরোধী হৈল পাপ শশধরে” কবিতাটি স্বতঃই মনে পড়িবে। মহিষালবন্ধু যেখানে তাঁহার মর্ম্মান্তিক বিরহের সুরটি বাঁশীতে ধ্বনিত করিয়া কাতর ভাবে দুঃখ নিবেদন করিতেছেন, সেই সুর সাজুতী কন্যার বুকে শেলের মত বিঁধিতেছে। তাহার মহিষাল বঁধু বুঝি তাঁহার জন্য আকুলি বিকুলি করিয়া মরিতে বসিয়াছে, এই ভাবনায় তিনি গৃহে ছট্‌ফট্ করিতেছেন। এই প্রাণমাতান বাঁশীর সুরে নায়িকার হৃদয় তন্ত্রী বাজিয়া উঠিতেছে। বাঁশীসম্বন্ধীয় এই প্রসঙ্গে চণ্ডীদাসের অসংখ্য গীতি মনে পড়িবে। “সরল বাঁশের বাঁশী নামের বেড়া জাল। সবার অমিয়া বাঁশী, রাধার হৈল কাল॥”—“খলসংহতি সরলা, তা কি জাননা বাঁশী, আমি একে নারী তায় অবলা,” হইতে আরম্ভ করিয়া “কৃষ্ণকীর্ত্তনের” সেই অতুলনীয় “কেনা বাঁশী বাএ বড়ায়ি যমুনা