পাতা:পূরবী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সমুদ্র


হে সমুদ্র, স্তব্ধচিত্তে শুনেছিনু গর্জ্জন তোমার
রাত্রিবেলা; মনে হ’লো গাঢ় নীল নিঃসীম নিদ্রার
স্বপ্ন ওঠে কেঁদে কেঁদে। নাই, নাই তোমার সান্ত্বনা;
যুগ-যুগান্তর ধরি’ নিরন্তর সৃষ্টির যন্ত্রণা
তোমার রহস্য-গর্ভে ছিন্ন করি’ কৃষ্ণ আবরণ
প্রকাশ সন্ধান করে। কত মহা-দ্বীপ কত মহা-বন
এ তরল রঙ্গশালে রূপে প্রাণে কত নৃত্যে গানে
দেখা দিয়ে কিছুকাল, ডুবে গেছে নেপথ্যের পানে
নিঃশব্দ গভীরে। হারানো সে চিহ্ন-হারা যুগগুলি
মূর্ত্তিহীন ব্যর্থতায় নিত্য অন্ধ আন্দোলন তুলি’
হানিছে তরঙ্গ তব। সব রূপ সব নৃত্য তা’র
ফেনিল তোমার নীলে বিলীন দুলিছে একাকার।
স্থলে তুমি নানা গান উৎক্ষেপে করেছো আবর্জ্জন,
জলে তব এক গান, অব্যক্তের অস্থির গর্জ্জন॥