পাতা:পূরবী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পূরবী
১০৬

হে সমুদ্র, একা আমি মধ্যরাতে নিদ্রাহীন চোখে
কল্লোল-মরুর মধ্যে দাঁড়াইয়া, স্তব্ধ ঊৰ্দ্ধলোকে
চাহিলাম; শুনিলাম নক্ষত্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাজে
আকাশের বিপুল ক্রন্দন; দেখিলাম শূন্য-মাঝে
আঁধারের আলোক-ব্যগ্রতা। কত শত মন্বন্তরে
কত জ্যোতির্লোক গূঢ় বহ্ণিময় বেদনার ভরে
অস্ফুটের আচ্ছাদন দীর্ণ করি’ তীক্ষ রশ্মিঘাতে
কালের বক্ষের মাঝে পেলো স্থান প্রোজ্জ্বল প্রভাতে
প্রকাশ-উৎসব দিনে। যুগ-সন্ধ্যা কবে এলো তা’র,
ডুবে গেলে অলক্ষ্যে অতলে। রূপ-নিস্ব হাহাকার
অদৃশ্য বুভুক্ষু ভিক্ষু ফিরিছে বিশ্বের তীরে তীরে,
ধূলায় ধূলায় তা’র আঘাত লাগিছে ফিরে ফিরে।
ছিল যা প্রদীপ্তরূপে নানা ছন্দে বিচিত্র চঞ্চল
আজ অন্ধ তরঙ্গের কম্পনে হানিছে শূন্যতল॥


হে সমুদ্র, চাহিলাম আপন গহন চিত্তপানে;
কোথায় সঞ্চয় তা’র, অন্ত তা’র কোথায় কে জানে।