পাতা:পূরবী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৭
পূরবী

ধেয়েছে দক্ষিণ মুখে, মরণের রুদ্রনেশা-পাওয়া;
বাজায় অশান্ত ছন্দে তাল-পল্লবের করতাল,
ফুকারে বৈরাগ্যমন্ত্র; স্পর্শে তা’র হ’য়েছে মাতাল
প্রান্তরের প্রান্তে প্রান্তে কাশের মঞ্জরী, কাঁপে তা’রা
ভয়কুণ্ঠ উৎকণ্ঠিত সুখে,—বলে, বৃন্ত-বন্ধহারা
যাবো উদ্দামের পথে, যাবো আনন্দিত সর্ব্বনাশে,
রিক্তবৃষ্টি মেঘ সাথে, সৃষ্টিছাড়া ঝড়ের বাতাসে,
যাবো, যেথা শঙ্করের টলমল চরণ-পাতনে
জাহ্নবীতরঙ্গমন্দ্র-মুখরিত তাণ্ডব-মাতনে
গেছে উড়ে জটাভ্রষ্ট ধুতুরার ছিন্নভিন্ন দল,
কক্ষচ্যুত ধূমকেতু লক্ষ্যহারা প্রলয়-উজ্জ্বল
আত্মঘাত-মদমত্ত আপনারে দীর্ণ কীর্ণ করে
নির্ম্মম উল্লাস-বেগে, খণ্ড খণ্ড উল্কাপিণ্ড ঝরে,
কণ্টকিয়া তোলে ছায়াপথ।”
ওরা ডেকে বলে, “কবি,
সে তীর্থে কি তুমি সঙ্গে যাবে, যেথা অস্তগামী রবি
সন্ধ্যা-মেঘে রচে বেদী নক্ষত্রের বন্দনা-সভায়,
যেথা তা’র সর্ব্বশেষ রশ্মিটির রক্তিম জবায়
সাজায় অন্তিম অর্ঘ্য; যেথায় নিঃশব্দ বেণু-পরে
সঙ্গীত স্তম্ভিত থাকে মরণের নিস্তব্ধ অধরে?”