পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - অষ্টম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাশ্চাত্য-সাহিত্যে বাণিজ্য-প্ৰসঙ্গ । >のう বলিতে হয়। আর কনিস্কের দরবার হইতেই রোম-সম্রাট ট্রেজানের দরবারে দূত প্রেরিত হইয়াছিল, সিদ্ধান্ত হইয়া যায়। যাহা হউক, ঐতিহাসিক তাহার ভ্রম বুঝিতে পারিয়াই পরবর্তী গ্রন্থে তাহার সংশোধন করিয়াছিলেন,-ইহাই আমাদিগের সিদ্ধান্ত । কোসিয়াসও রোমসম্রাটের দরবারে ভারতীয় দূতের উপস্থিতি সপ্রমাণ করিয়াছেন। ট্ৰেজান যখন তাইগ্রিস নদীর মোহানায় উপস্থিত হন, যা তখন তিনি ভারতীয় অর্ণবপোত স্বচক্ষে প্ৰত্যক্ষ করিয়াছিলেন। তখন সেই পোত ভারতের অভিমুখে গমম করিতেছিল । ট্রেজান ১১৭ খৃষ্টাব্দ পৰ্যন্ত রাজত্ব করিয়াছিলেন। তঁহার রাজত্ব-কালেও ভারতের বাণিজ্য বিশেষ সমৃদ্ধ ছিল। ভারতেয় সহিত রোমের এই সখ্যতার দ্বিবিধ কারণ পণ্ডিতগণ নিৰ্দ্ধারণ করেন। পাৰ্থিয়ানগণ এবং সাসানীয়গণ রোম-সাম্রাজ্যের চিরশত্রু। রোম সম্রাট বুঝিয়াছিলেন,-ঐ দুই প্ৰবল শক্তিকে দমন করিতে মা পারিলে, রোম-সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা অক্ষুন্ন রাখা সম্ভবপর নহে। ‘অপিচ, প্রাচ্যের সহিত প্রতীচ্যের বাণিজ্য-সম্বন্ধ সংরক্ষণও একরূপ অসম্ভব। তাই ভারতের সহিত বোমের বন্ধুত্ব-বন্ধন আবশ্যক হইয়াছিল । সিন্ধু নদের উপত্যক-প্ৰদেশ এবং বাকত্ৰিয়া রাজ্য তখন কুশন বা শক বংশের অধিকারভুক্ত। সুতরাং কুশন বা শক নৃপতিগণের সহিত সখ্যতঃ-সুত্রে আবদ্ধ হওয়া রোমীয়গণ বিশেষ প্রয়োজন ঘলিয়া মনে করিয়াছিলেন। পাশ্চাত্য জাতি কুটরাজনীতিবিশারদ। ‘যা শত্রু পরে পরে’- এই নীতি অবলম্বনে আপনাকে নিরাপদ রাখিবার উদ্দেশ্যেই রোমের এই সখ্যতা-বন্ধনের আগ্ৰহ। . স্বার্থ-সাধনই এই সখ্যতার মূলীভুত । যাহা হউক, পাৰ্থিয়ান ও সাসানীয়দিগকে দমনে রাখিয়া বাণিজ্য চালাইবার উদ্দেশ্যেই মার্ক এণ্টনির সময় হইতে জাষ্টিনিয়ানের রাজ্যকাল পৰ্যন্ত (৩০ পূর্ব-খৃষ্টাব্দ হইতে ৫৫০ খৃষ্টাব্দ পৰ্য্যন্ত) রাজকীয় দূতগণের গতিবিধি-সুত্রে রোম-সাম্রাজ্য ভারতের সখ্যতা-বন্ধন অক্ষুন্ন রাখিতে বাধ্য হইয়াছিল। একটী ঘটনার উল্লেখ করিতেছি। রোমীয় সেনাপতি কোরবুলো ৬০ খৃষ্টাব্দে ‘হির্কানিয়া” প্রদেশের রাজদূতকে সিন্ধুনদ পৰ্যন্ত পৌছাইয়া দিয়াছিলেন। সেখান হইতে শক-নৃপতিগণের রাজ্যের মধ্য দিয়া রাজদূত হিৰ্কানিয়ায় পৌছিবার সুবিধা পাইয়াছিল। ঐতিহাসিকগণ বলেন,-“পেরিপ্লাস’ প্ৰভৃতি গ্রন্থে ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের যে উপাদান দৃষ্ট হয়, তাহারও মূল রোম-সম্রাজ্যোব সহিত ভারতের এই ঘনিষ্ট সখ্যতা-বন্ধন। বহুকাল এইরূপ সখ্যতা-বন্ধনের ফলে ভারতের এই এক সুবিধা হইয়াছিল যে,-কুশন রাজগণ এবং পেশোয়ারের সীমান্তের অন্যান্য নৃপতিগণ মুদ্রাঙ্কন বিষয়ক অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছিলেন। এই অভিজ্ঞতার ফলেই ভারতে মুদ্রা প্ৰচলিত হইয়াছিল । আমরা কিন্তু তাহা স্বীকার করি না । সভ্যতার আদি-ক্ষেত্র-ভারত কাহারও নিকট কোনও বিষয়ে শিন্যত্ব স্বীকার করে নাই। মুদ্রাঙ্কন ভারতেরই উদ্ভাবিত।

  • McCrindle's Ancient in lia, (190) p. 213 it v, A. Smith, Early History of India, and & 3rd Editions,