yê ভারতবর্ষ । তঁহার “গুপ্ত-কাল’ বলিয়া তাহাকে অভিহিত করেন নাই ; কিন্তু জনসাধারণ “গুপ্ত-কাল’ বলিয়াই তাহ ব্যবহার করিয়াছে । এইরূপে, কানিংহাম সিদ্ধান্ত করেন,-আলবারুণির গ্রন্থোক্ত অংশের ফরাসী পণ্ডিত যে অনুবাদ প্ৰকাশ করিয়াছেন, তাহা ভ্ৰমসকুল। ঐ অংশের সঠিক অনুবাদ -“গুপ্ত-বংশের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে গুপ্ত-সংবৎ বিলুপ্ত হয়।” এই হিসাবে তিনি ৩১৯ খৃষ্টাব্দে গুপ্ত-কালের প্রারম্ভ স্বীকার করিয়াছেন । কিন্তু কানিংহামের এ মত শীঘ্রই পরিবর্তিত হয়। ১৮৬৩ খৃষ্টাব্দে প্ৰকাশিত “আর্কিয়লজিক্যাল রিপোর্টে” কানিংহাম প্ৰকাশ করেন,-“গুপ্তনৃপতিগণের উচ্ছেদ-সাধনের সময় হইতেই গুপ্তকাল আরম্ভ হয়।” এই সিদ্ধান্তের সমর্থন জন্য কানিংহাম গুপ্ত-গণের স্বর্ণমুদ্রার সহিত ইন্দো-সিদীয় স্বর্ণমুদ্রার এবং গুপ্ত-গণের রৌপ্য-মুদ্রার সহিত সৌরাষ্ট্রের সা-নৃপতিগণের রৌপ্যমুদ্রার তুলনায় সমালোচনা করেন। এইরূপে তাহার সিদ্ধান্ত হয়,-গুপ্ত-বংশের প্রাচীন নৃপতিগণ অবশ্যই কুশন-বংশীয় শকনৃপতিগণের সমসাময়িক ছিলেন ; সুতরাং গুপ্ত-গণ খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দীর পরবৰ্ত্তিকালের হইতে পারেন না। অপিচ, প্ৰথম চন্দ্ৰগুপ্তকে যদি গুপ্ত-কালের প্রতিষ্ঠাতা বলিয়া ধরিয়া লই, তাহা হইলে প্ৰচলিত সর্ববিধ গণনার সহিত সামঞ্জস্য রক্ষিত হয়। এক্ষণে, আলবাকণির উক্তি হইতে বুঝা যায়,-বিক্ৰমাদিত্য নামক জনৈক নৃপতি শকদিগকে পরাজিত করিয়া শাক-সংবৎ প্ৰবৰ্ত্তিত করিয়াছিলেন। মুদ্রাদিতে যে বিক্ৰমাদিত্য নাম দেখিতে পাই, তাহ প্ৰথম চন্দ্রগুপ্তেরই নামান্তর। এলাহাবাদ স্তম্ভ-লিপিতে আবার প্রকাশ-প্ৰথম চন্দ্ৰ-গুপ্তের পুত্ৰ সমুদ্র-গুপ্ত শকদিগের নিকট হইতে রাজকর সংগ্ৰহ করিতেন । এই সকল প্ৰমাণে, জেনারেল কানিংহাম শাক-সংবৎকেই প্ৰকৃতপক্ষে গুপ্ত-কাল বলিয়া নির্দেশ করেন ; আর প্রথম চন্দ্ৰগুপ্ত তাহার প্রতিষ্ঠাতা বলিয়া নিৰ্দ্ধারিত হন। সে মতে ৭৯ খৃষ্টাব্দ হইতে ঐ কালের আরম্ভ সুচিত হয়। ১৮৭১ খৃষ্টাব্দে প্ৰকাশিত “আৰ্কিয়লজিক্যাল সার্ভে অব ইণ্ডিয়া” গ্রন্থে আবার জেনারেল কানিংহাম আর একটু স্বতন্ত্র মত প্ৰকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন,-“গুপ্তকাল গণনায় শক-সংবতের অনুসরণই সমীচীন। তাহা হইলে '৩১৯ খৃষ্টাব্দে গুপ্ত-বংশের ধ্বংসমূলক সিদ্ধান্তের সহিত সামঞ্জস্য রক্ষিত হয়। এইরূপ সিদ্ধান্তের অনুসরণে, কানিংহামের কাহাউম স্তম্ভলিপিতে স্কন্দগুপ্তের উৎকীর্ণ ১৪১ অব্দের সহিত ২১৯ খৃষ্টাব্দে অভিন্নতা প্ৰতিপন্ন হয়। পর পর ঘটনাবলির অনুসরণে, বিক্রম এবং শক সংবতের আলোচনা-প্রসঙ্গে কানিংহাম, আলবারুণির গ্রন্থোক্ত বিক্ৰমাদিত্য এবং শালিবাহনকে অভিন্ন প্ৰতিপন্ন করিয়াছেন। ১৮৭৩ খৃষ্টাব্দেও কানিংহাম সেই একই মত প্ৰকাশ করেন। তখনও তঁহার সিদ্ধান্ত-৭৮ খৃষ্টাব্দে গুপ্তবংশের রাজ্যকাল আরম্ভ হয়। কনিক্ষ, হবিষ্ক প্রভৃতি নৃপতিগণের কাল, তিনি সে হিসাবে বিক্ৰমাব্দে নির্দেশ করিয়াছেন। এইরূপে, তাহার মতে, ৫৭ পূৰ্ব্ব-খৃষ্টাব্দ হইতে ৭৯ খৃষ্টাব্দ পৰ্যন্ত ইন্দো-সিদীয় অর্থাৎ শক্যুপতি-গণের রাজ্যকাল নির্দিষ্ট হয়। এই ৭৯ খৃষ্টাব্দেই, তাহার মতে, শালিবাহন কর্তৃক বিক্ৰমাদিত্য-বংশের উচ্ছেদ সাধিত হইয়াছিল।