পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - অষ্টম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\90 ভারতবর্ষ। ভৌগোলিক অবস্থানে বৈশিষ্ট্য । ধৰ্ম্মের বিভিন্নতাই যে ভারতের এই বৈশিষ্ট্যের একমাত্র কারণ, তাহা নহে। ভারতের ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিভাগ-সমূহকেও অন্যতম কারণ বলিয়া নির্দেশ করিতে পারি। জাতীয় ইতিহাসের আলোচনায় প্ৰতিপন্ন হয়,--ভৌগোলিক অবস্থানাদির বৈশিষ্ট্য-বশতঃ দেশের রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য সৎরক্ষিত হইয়া থাকে। দৃষ্টান্ত-স্বৰূপ প্ৰাচীন গ্রীসের বিষয় উল্লেখ করা যাইতে পারে। গ্রীস স্বভাবতঃ পৰ্ব্বতবহুল। পৰ্ব্বতাকীর্ণ বলিয়া গ্রীসের বিভিন্ন দেশ পরস্পর স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত। তাই বলিতেছিলাম-জাতীয় ইতিহাস, রাজনীতির ইতিহাস, অনেকাংশে ভৌগোলিক সংস্থানের অনুৰূপই হইয়া থাকে। গ্ৰীসের প্রাচীন ইতিহাসে তাই কেন্দ্রীভুত রাজশক্তির পরিচয় পাই না । তখন গ্রীসের কোনও অংশই অপব অংশের উপব আধিপত্য বিস্তারে সমর্থ হয় নাই, অথবা সমষ্টিভাবে গ্রীসের রাজনৈতিক সংস্থানের পরিচয় পাই না । তখন গ্রীসের প্রত্যেক অংশ স্বাধীনতা-প্ৰয়াসী হইয়া পরস্পর দ্বন্দ্ৰে প্ৰবৃত্ত হষ্টিয়াছিল। সাগবমেখলা-পরিবেষ্টিত গ্রীসের প্রত্যেক জনপদই স্ব স্ব শক্তি-সঞ্চয়ে নৌ-বাল-বৃদ্ধিব প্ৰয়াসী হইয়া উঠিয়াছিল। ভারতের সম্বন্ধেও তাহাঁই ঘটিয়াছিল । নদীমাতৃক ভারতে নদ-নদীর বাহুল্য-বশতঃ এবং পৰ্বতপ্রাচীর-পরিবেষ্টন নিবন্ধন-ভারতেব বাজনৈতিক চিত্রপটে পরিবর্তন সঙ্ঘটিত হইয়াছিল। অভ্ৰভেদী হিমাচল, এসিয়া-খণ্ডের অন্যান্য অংশ হইতে ভারতকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র রাখিয়াছে। পশ্চিমে পর্বতমালা সাগরমেখলা-তাহার স্বাতন্ত্র্য রক্ষা কবিয়াছে। দক্ষিণে-পূর্বে সাগর-তবঙ্গ নাচিয়া নাচিয়া তাহার স্বাতন্ত্র্য বিঘোষিত করিয়াছে। এদিকে বিমান-বিচুম্বী সুদৃঢ় বিন্ধ্যশৈলশ্রেণী মস্তক উত্তোলন করিয়া, ভারতের স্বাতন্ত্র্যের বিজয়-দুন্দুভি নিনাদ করিতেছে। তাই ভারতের নিভৃতকুঞ্জে বসিয়া, ভারতের আর্য্যমনীষিগণ সামগানে জগৎকে মাতাইতে সমর্থ হইয়াছিলেন ;—তাই গগনস্পশী যজ্ঞধুমে ভাবতের শ্রেষ্ঠত্ব বিঘোষিত হইয়াছিল ;-তাই “একমেবাদ্বিতীয়ং” সাধনায় সিদ্ধ হইয়া ভারত আপনার শ্রেষ্ঠত্ব খ্যাপন করিতে পারিয়াছিল । যাহা হউক, ভারতের এই নদ-নদী, ভারতের পর্বতশ্রেণী যেমন বহিঃপ্রদেশে তেমনই অন্তর প্রদেশে-ভারতের স্বতন্ত্রত রক্ষা করিয়াছে। একদিকে যেমন পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশের সহিত ভারত সংশ্ৰবশ্বন্ত, তেমনি ভারতেব অভ্যন্তরস্থ নগব-জনপদও পরস্পর পরস্পরের সহিত ংশ্ৰব-শূন্য। এই জন্যই ভারতে বহিঃশত্রুর আক্রমণ অতি অল্পই দেখিতে পাই । ফলতঃ, প্ৰকৃতি যেন হিমালয়-রূপ পৰ্ব্বত-প্ৰাচীরে এবং তোয়নিধিৰূপ সলিল-প্ৰাকাবে ভারতকে নিরস্তর রক্ষা করিতেছেন । এইৰূপে ভারতের ভৌগোলিক সংস্থান ভারতের রাজনৈতিক ঐক্যসাধনের পরিপন্থী হইয়াছে। আৰ্য্যাবৰ্ত্তের উন্মুক্ত বাতায়নে উপবিষ্ট হইয়া আৰ্য মুনি-ঋষিগণ জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরমোৎকর্ষ সাধন করিয়াছেন । কিন্তু দুলক্তিঘ্য বিন্ধ্যপ্ৰাচীর উল্লঙ্ঘনে তঁহারা প্ৰয়াস পান নাই । তাই প্রাচীনকালে দাক্ষিণাত্যের সহিত আৰ্য্যাবর্তের কোনও সম্বন্ধ-সুত্রের পরিচয় পাই না । এইরূপে বুঝিতে পারি,-প্ৰাকৃতিক এবং ধৰ্ম্মনৈতিক স্বাতন্ত্র্য বশতঃ খৃষ্ট-শতাব্দীর পরবৰ্ত্তি, কালে ভারতের রাজশক্তি কেন্দ্রীভূত হইতে সমর্থ হয় নাই। খণ্ড খণ্ড রাজ্যে বিভক্ত হইয়া