পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - অষ্টম খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুপ্ত-বংশের অভু্যদয়ে সমাজ-ধৰ্ম্ম। 8ዒ প্রসারের পরিচয় বিস্তুমান আছে। এতদ্ভিন্ন, উত্তর আর্কটে, দক্ষিণ আর্কটে, মাদুরা জেলায়, তিলোভেলি জেলায় ও মহীশূর রাজ্যে জৈনধৰ্ম্মের প্রভাবের যথেষ্ট নিদর্শন বৰ্ত্তমান। কথিত হয় অজানন্দীর প্রচেষ্টায় ঐ সকল স্থানে জৈনধৰ্ম্ম প্ৰতিষ্ঠা লাভ করে । পহলবরাজ মহেন্দ্ৰবৰ্ম্মণ কুন্ডালোরের জৈনদিগের স্মৃতিস্তুস্তাদি ধ্বংস করিয়া। তদুপরি শিব-মন্দির নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন, সে পরিচয়ও ঐ সকল লিপিতে বৰ্ত্তমান রহিয়াছে। এইরূপে, দক্ষিণভারতেও নৃপতি-বৃন্দের উৎসাহবারিনিষেকে এবং পৃষ্ঠপোষকতায়, কয়েক শতাব্দী পৰ্যন্ত জৈন ও বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম প্ৰতিষ্ঠার শ্রেষ্ঠ আসনে সমাসীন ছিল। বৌদ্ধধৰ্ম্মের অধঃপতন । একদিকে যেমন জৈন ও বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম, অন্যদিকে তেমনি শৈব ও বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম-সকল ধৰ্ম্মই আপন আপনি স্বাতন্ত্র্য প্ৰতিষ্ঠা করিতেছিল। জৈন-ধৰ্ম্মের প্রভাব বিস্তারে বৌদ্ধধৰ্ম্ম ক্রমশঃ শ্ৰী-হীন হইতে থাকে । তামিল এবং সংস্কৃত সাহিত্য সে সাক্ষ্য প্ৰদান করিতেছে। একদিকে সামন্তভদ্র এবং অকলঙ্ক বৌদ্ধধৰ্ম্মের প্রভাব খর্ব করিতে লাগিলেন ; অন্যদিকে প্রচারকদিগের মধ্যে পরস্পর বিরোধ উপস্থিত হওয়ায় বৌদ্ধধৰ্ম্মের প্রসার হ্রাস হইয়া আসিল । সে সময়ে রাজগণ ভিন্ন-ধৰ্ম্মাবলম্বী হইলেন ; সুতরাং ত্যাহারা বৌদ্ধধৰ্ম্মের প্রতিষ্ঠা-কল্পে আর কোনও সহায়তা করিলেন না। শৈব ও বৈষ্ণব ধৰ্ম্মের প্রসার-প্রতিপত্তি ক্রমশঃই বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। ফলে, কয়েক বৎসরের মধ্যেই দক্ষিণ-ভারতে বৌদ্ধধৰ্ম্মেব প্রভাব বিলুপ্ত হইয়া আসিল । পরিশেষে বৌদ্ধধৰ্ম্মের অস্তিত্ব একেবারে বিলুপ্ত হইল। বৌদ্ধ-ধৰ্ম্মের ন্যায়। জৈন-ধৰ্ম্মেরও ক্রমশঃ একই পরিণতি ঘটিল। বিভিন্ন আচার-পদ্ধতির এবং বিভিন্ন নীতির অনুবৰ্ত্তিগণের সংশ্ৰব্য-সংসর্গে ক্রমশঃ ধৰ্ম্মে গ্লানি আসিয়া উপস্থিত হইল। নানা অবান্তর বিষয়ের সমাবেশে অনাচার অবিচারে সনাতন নীতি কলুষিত হইয়া পড়িল । প্ৰথমে স্বেচ্ছায় ধৰ্ম্মানুবৰ্ত্তিগণ মন্দিরাদিতে ধৰ্ম্মালোচনার জন্য গমন করিত। তখন, দীক্ষা-গ্রহণের পর, মন্দিরে ধৰ্ম্মোপদেশাদি শ্রবণ ধৰ্ম্মগ্রহণের একটী প্ৰধান অঙ্গ মধ্যে পরিগণিত ছিল। কিন্তু পরবৰ্ত্তিকালে তাহাতে অনাস্থা আসিয়া পড়িল। ক্ৰমে মন্দিরে লোকসমাগম কমিয়া আসিল। সুতরাং তখন নানা অবৈধ উপায় অবলম্বনের আবশ্যক হইয়া পড়িল । রাজকৰ্ম্মচারিগণের সহায়তায় নানা অত্যাচার-উৎপীড়ন আরম্ভ হইল। এইরূপে ধৰ্ম্মে প্ৰকৃত শ্ৰদ্ধা উৎপাদন করা অপেক্ষা, মন্দিরে জনসংখ্যা-বৃদ্ধিই সকলের প্রধান লক্ষ্য হইয়া পড়িল। লক্ষ্যভ্ৰষ্ট হওয়ায় ক্রমশঃ ধৰ্ম্মে গ্লানি আসিয়া উপস্থিত হইল । ক্ৰমে অত্যাচারের ভীষণ নিষ্পেষণ অসহ্য হইয়া উঠিল। জনসাধারণ শক্তিশালী কোনও ত্ৰাণকৰ্ত্তার আবির্ভাব কামনা করিতে লাগিল। এই ঘোর দুর্দিনে বৈষম্যে সাম্য স্থাপন জন্য আবার যেন ভগবানের আসন টলিল। এই সময় অদ্বৈত-তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা শঙ্করাবতার শঙ্করাচাৰ্য্য আবিভূতি হইলেন। সঙ্গে সঙ্গে নানাসৰ্ব্বানন্দ, ত্রিরুণাভুক্তরম্ (অল্পর ) এবং সুন্দর প্রভৃতি শৈবধৰ্ম্মের পৃষ্ঠপোষকগণ ধৰ্ম্মমাহাত্ম্য-কীৰ্ত্তনে, ধৰ্ম্মের গ্লানি-বিদূরণে উদবুদ্ধ হইলেন। বৈষ্ণবধৰ্ম্মের প্রচারক নন্মলচর, মধুরাকবি এবং তিরুময় ঘাই প্রভৃতি পরম বৈষ্ণবের আবির্ভাব হইল।