পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন বঙ্গের গৌরব-বিভব । ২৫৫ হইতে র্যাহার। আসিলেন, তাহার প্রথমে হিমালয়ের নিকটে নিকটে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে থাকিবেন, এবং তত্তৎপ্রদেশে স্থান-সন্ধুলান না হইলে তবে তো বঙ্গদেশের অভিমুখে অগ্রসর হইতে বাধ্য হইবেন ! এই শিক্ষ—এই চিন্ত৷ মস্তিষ্কে প্রবেশ করিলে, বঙ্গাদি দেশ সাগর-গর্ভে প্রোথিত থাকা ভিন্ন অন্য সিদ্ধান্ত কি আর সম্ভবপর ? এই মূলে গলদ যেদিন হইতে প্রবেশ করিয়াছে, সেই দিন হইতেই বঙ্গের অনস্তিত্ব, আধুনিকত্ব, অপবিত্রত প্রভৃতির কল্পনা মস্তিষ্ক অধিকার করিয়া বসিযাছে। পাশ্চাত্য-জাতির সহিত সংশ্রবের পূৰ্ব্ব, বঙ্গাদি দেশের উপর পাশ্চাত্য-প্রভাব বিস্তৃত হওয়ার পূৰ্ব্বে, এবম্বিধ চিত্ত। কখনও কাহারও মস্তিষ্কে স্থান পাইয়াছিল বলিয়া প্রমাণ পাওয়া যায় না । কোনও শাস্ত্র-গ্রন্থে কিম্বা কোনও প্রাচীন পুথিপত্রে বঙ্গের আধুনিকত্ব বা অপবিত্রতা-মূলক কোন উক্তি দেখিতে পাইবেন না । যদি কোথাও কেহ দেখিতে পান, তাহ বঙ্গাদি দেশের প্রতি বিদ্বেষবিশিষ্ট কোনও ব্যক্তি কর্তৃক পরবর্তিকালে সংযোজিত হইয়াছে বলিয়াই প্রতিপন্ন হয়। তঁহাদের চাতুৰ্য্যে ও পাশ্চাত্য-মতের প্রভাবে উক্ত ভাবপ্রবাহ দেশমধ্যে প্রবাহিত হইয়াছে—নিঃসন্দেহ । সাধারণতঃ যে যে যুক্তি অবলম্বনে বঙ্গদেশের আধুনিকত্ব প্রমাণ করা হয়, তাহার দুই-একটা প্রধান যুক্তি নিম্নে প্রকটন করা যাইতেছে। প্রথম, বঙ্গদেশের কতকগুলি গ্রাম-নগরের দ্বীপান্তক নাম দৃষ্ট হয় ; যথা নবদ্বীপ, অগ্রদ্বীপ, চন্দ্রদ্বীপ, সন্দ্বীপ ইত্যাদি ৷ সাগর-মধ্যে প্রথমে দ্বীপগুলির সঞ্চার হইয়া ক্রমশঃ এই সকল দ্বীপ বঙ্গদেশের অন্তর্ভুক্ত হইয়া পড়িয়ছে। এইরূপ দিয়া-সংযুক্ত যে কতকগুলি গ্রাম-নগর দৃষ্ট হয় ( কঁাটাদিয়া, জয়দিয়া, সাগরদিয়া প্রভৃতি ), সেগুলিও ‘দ্বীপ’ ছিল । ‘দিয়া”—দ্বীপের অপভ্রংশ । ‘কাটী’ ও ‘চর’ প্রভূতি যুক্ত নগর-গ্রামের ( চরসংযুক্ত গ্রাম ; যথা,—সুখচর, শিবচর, বগচর, পাচচর প্রভৃতি ; কাটী-সংযুক্ত গ্রাম ; যথা,-রায়েরকাট, স্বরূপকাটা, কলসকাটা, ঝালকাট, বিদ্যানন্দকাট ইত্যাদি ) নাম দেখিয়াও ঐ সকল স্থান সমুদ্রের গর্ভ হইতে উৎপন্ন হইয়াছে বলিয়া সিদ্ধান্ত হয়। বাদায় খাল কাটিয়া বাধ বধিয়া গ্রাম-পত্তন হয় ; নদীর চর, সমুদ্রের চর বসতি-যোগ্য হয় ;–ইহা অনেকেরই প্রত্যক্ষীভূত। সুতরাং সেই প্রত্যক্ষ প্রমাণের প্রতাবে বঙ্গের গ্রাম-নগর-সমূহ সেদিন সমুদ্রগর্ভ হইতে উঠিয়াছিল প্রতিপন্ন হয় । সাগব শুষ্ক হইয়া ‘শুষ্কসাগর’ ‘শুষ্কচর’ হইতে ‘সুখসাগর’ ‘সুখচর প্রভূতি গ্রামের নামোৎপত্তি ঘটিয়াছে। ‘দহ-সংযুক্ত স্থান-সমূহ (চক্রদহ, খড়দহ, এড়িয়াদহ প্রভৃতি) সমুদ্রান্তর্গত দহ-পাশ্বাস্থিত গ্রাম ছিল বলিয়াই এরূপ সংজ্ঞা লাভ করিয়াছে। এই হইল— একবিধ যুক্তি। বলা বাহুল্য, এ প্রকার যুক্তি নিতান্তই ভিত্তিহীন । গ্রামের নামকরণের আধুনিকত্বের সহিত ঐরূপ সম্বন্ধ টানিয়া আনিয়া এইরূপ গুরুতর সিদ্ধান্তে উপনীত কারণ-কল্পনা হওয়া কখনই সমীচীন নহে । গ্রামের নাম যদি হয়—রত্নপুর ; তাহ মুক্তিহীন হইলে কি বুঝিতে হইবে গ্রামখানি রত্বে পরিপূর্ণ ছিল ? গ্রামের নাম— সুবর্ণগ্রাম ; বুঝিতে হইবে কি—গ্রামখানি সুবর্ণে মণ্ডিত ? এইরূপ দ্বীপান্তক নাম দেখিয়৷ গ্রামকে কখনও সমুদ্র-মধ্যগত দ্বীপ বল। যাইতে পারে না । ‘নয়ন-কমল বলিতে ‘কমলের নয়ন' না বুঝাইয়া কমল-বৎ প্রতীয়মান নয়ন বুঝাইয়া থাকে, কুঞ্জয়-গতি