ভারতের সাহিত্য-সম্পং । ኟዒጫ সে মতে, ঐ সকল লিপির ক্রমবিকাশেই ভারতে কাব্য-সাহিত্যের প্রবর্তন । বুলার, ফ্লৗট, ম্যাকৃডোনেল প্রভৃতি পাশ্চাত্য-পণ্ডিতগণের গবেষণার আলোচনায় এই মতই প্রকট দেখি । খৃষ্টীয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দী হইতে শিলাফলক প্রভূতিতে কবিতার সূচনা হইয়। খৃষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে তাহ বিকাশ প্রাপ্ত হয়,—র্তাহাদের মস্তব্যের ইহাই স্কুল সিদ্ধান্ত। এই বিষধ পূর্বপ্রকাশিত র্তাহাদের মন্তব্যে বুঝ। গিয়াছে। আর র্তাহার। যাহা খৃষ্টীৰ পঞ্চম শতাব্দীর প্রবর্তন বলিয়া স্থির করিয়াছেন, ম্যাক্সমুলার প্রমুখ অপর শ্রেণীর পণ্ডিতগণ তদ্বিষয়ে ষষ্ঠ শতাব্দী নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন । এতদুভয় মতে শতাধিক বর্ষের পার্থক্য মাত্র দেখিতে পাই । কিন্তু একটু অনুধাবন করিয়া দেখিলে, উভয় মতই যে ভ্রান্তিপূর্ণ, তাহ সহজেই প্রতিপন্ন হয়। শিলালিপির প্রবর্তনা কি আদিম অবস্থার পরিচায়ক ? জাতি সভ্য-সমুন্নত ও প্রতিষ্ঠান্বিত না হইলে, কখনই লিপিফলকে তাহার বিজয়বাৰ্ত্ত বিঘোষিত হয় না। আর, লিপিফলক-পৃষ্টে কবিত্বের বা সাহিত্যের স্বষ্টিতত্ত্ব নির্ণয় করিতে যাওয়াও সমীচীন নহে । বর্তমান বৃটিশ-রাজত্বে প্রায় প্রতি সদনুষ্ঠানের পরিচয়-প্রসঙ্গে প্রস্তরলিপির প্রবর্তন দেখিতে পাই । কোথাও বিদ্যামন্দির প্রতিষ্ঠিত হইবে ; দেখুন,— সেখানে প্রস্তরফলকে তদ্বিবরণ খোদিত হইতেছে । কোথাও বিচারালয় প্রতিষ্ঠা হইবে ;—সেখানে প্রস্তরফলকে খোদিত-লিপির মধ্যে তাহার পরিচয় রহিয়াছে। এইরূপ, বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ অনুষ্ঠানের মধ্যেই লিপিফলকের প্রভাব প্রত্যক্ষীভূত । ইংরাজ-রাজত্বে প্রধানতঃ ইংরাজী ভাষাতেই এই সকল লিপিফলক খোদিত হয় । কিন্তু, ইহাতে কি বলিতে হইবে, ইংরাজী-সাহিত্যের বা লিপিফলকে খোদিত ভাষার ( সে ভাষা যে ভাষাই হউক) ইহাই আদি-স্তর ? অধুনা সংস্কৃত-কবিতায়ও অনেক লিপিফলক লিখিত হইয়া থাকে। মনে করুন,-কেহ একটী শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করিলেন ; আর সেই মন্দিরগাত্রে প্রস্তরফলকে সংস্কৃত-কবিতায় অক্সিপরিচয়-সহ শিবমাহাত্ম্য কীৰ্ত্তন করিয়া রাখিলেন । কিছুকাল পরে সেই মন্দিরের সেই শিলাফলক আবিষ্কার করিয়া যদি কেহ বলেন,— “সংস্কৃত-কবিতার বিকাশ-প্রাপ্তির ইহাই আদি-স্তর ;” তাহাই কি মানিয়া লইতে হইবে ? কখনই নয়। এক এই দৃষ্টাস্তের অবতারণায় বলিতে পারি, গির্ণর প্রভৃতি স্থানে যে সকল শিলালিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহ। কখনই সংস্কৃত-সাহিত্যের বা সংস্কৃত-কাব্যের আদি-স্তর নহে । সুতরাং ঐ সকল লিপিফলকের ক্রমবিকাশে খৃষ্টীয় পঞ্চম বা ষষ্ঠ শতাব্দীতে কালিদাস প্রমুখ কবিগণের যে অদ্ভু্যদয় ঘটিয়াছিল, সে সিদ্ধান্ত একান্ত ভ্রমসস্থল। মহাকবি কালিদাস-প্রমুখ কবিগণের কাব্যগ্রন্থ-সমূহের কাল-নির্ণয়ের প্রয়াসে এ ভ্রম বিশদীকৃত হয়। প্রাচীন ভারতে বহু বিক্রমাদিত্য ও বহু কালিদাস বিদ্যমান ছিলেন। একটু অস্থসন্ধান করিলে বুঝা যায়, ‘বিক্রমাদিত্য' শব্দ এক সময়ে রাজচক্রবৰ্ত্তিত্বজ্ঞাপক সংজ্ঞা-মধ্যে a.ap, পরিগণিত হইয়াছিল, এবং কালিদাস-নামও কবিজনপরিচায়ক বিশেষণ \g মধ্যে গণ্য ছিল। রাজগণের মধ্যে যিনিই একটু ক্ষমতাশালী হইতেন, *" তিনিই আপনাকে রাজচক্রবর্তী বিক্রমাদিত্য বলিয়া ঘোষণা করিতেন ; আবার যিনিই একটু কবিত্বের স্পর্ক। রাখিতেন, তিনিই কালিদাস বলিয়। আপনার পরিচয়
