পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

总>b ভারতবর্ষ । বাঙ্গালায় মিশ্র উপাধিধারী ব্রাহ্মণ নাই ; সুতরাং কালিদাস অক্ট দেশের লোক ছিলেন । বলা বাহুল্য, এ যুক্তি ভিত্তিহীন। বাঙ্গালায় মিশ্র-উপাধিধারী ব্রাহ্মণ অনেক আছেন । বরেন্দ্র-সমাজে বরেন্দ্রভূমে মালদহ-জেলায় মিশ্র-উপাধিধারী বহু ব্ৰাহ্মণ বাস করেন। ফলতঃ, খৃষ্ট-পূৰ্ব্ব শতাব্দীতে কালিদাসের বিদ্যমানতা এবং তাহার বাঙ্গালিত্ব বিবিধ বিধানেই প্রতিপন্ন হয় । মহাকবি কালিদাসের দুই প্রধান কাব্য-রঘুবংশ ও কুমারসম্ভব। রঘুবংশ উনবিংশ সর্গে বিভক্ত। প্রথম তিন সর্গে রাজা দিলীপের, চতুর্থ হইতে অষ্টম সর্গে রঘুর ও অজের, নবম হইতে পঞ্চদশ সর্গে দশরথের ও শ্রীরামচন্দ্রের এবং শেষ সগত্রয়ে রঘুবংশ। লব-কুশ হইতে আরম্ভ করিয়া অগ্নিবর্ণ পর্য্যন্তের বিবরণ বিবৃত আছে। বণিতব্য বিষয় প্রধানতঃ রামায়ণের অনুসারী । কিন্তু বর্ণনার লাগিতো, উপমার মনোহারিত্বে, কবিত্বের পরিস্ফুটনায়, সেই আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার পরিজ্ঞাত রামায়ণী কাহিনী এক অভিনব রূপ ধারণ করিয়া আছে। সৰ্ব্বজুনবিদিত পুরাতন বিষয় কবির তুলিকায় কি মনোহর মূৰ্ত্তি ধারণ করে, রঘুবংশ তাহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ । ঘটনাবৈচিত্র্য অথবা উৎকট চরিত্র-চিত্র নাই ; অথচ, উহ! পাঠে পাঠকের প্রাণে ঐকান্তিক আগ্রহ আনয়ন করে । সঙ্ক্ষেপে দুই চারিট দৃষ্টাস্তের অবতারণা করিতেছি। তাহাতে উচ্চ-আদর্শ, উচ্চ-তাব, উচ্চ-কবিত্ত্ব, উচ্চ-উপম। আপনিই নয়ন-সমক্ষে প্রতিভা ত হইবে । রাজা দিলীপ প্রজার নিকট কর গ্রহণ করিতেন । কবির উপমায় ব্যক্ত হইল,— “প্রজানামেব ভূত্যৰ্থং স তাভো বলিমগ্রহীৎ। সহস্ৰগুণমুৎস্রষ্টুমাদত্তে হি রসং রবি ॥” ‘যেমন সুর্য্যদেব রস আকর্ষণ করেন—সহস্র গুণ রস-বিতরণের জন্য, সেইরূপ রাজ দিলীপ প্রজাদিগের নিকট যে কর গ্রহণ করেন—তাহাদেরই মঙ্গলের জন্য। রাজার কৰ্ত্তব্য বুঝাইবার পক্ষে ইহার অধিক সুন্দর উপমা কি হইতে পারে ? রাজা দিলীপ কিরূপ আদর্শ রাজা ছিলেন, তৎসম্বন্ধে কবি আরও বলিয়াছেন,— “প্রজানাং বিনয়াধানাদ্রক্ষনাত্তরণাদপি । স পিতা পিতরস্তাসাং কেবলং জন্মহেতবঃ ॥” “তিনি ভরণপোষণ ও শিক্ষাদান জন্য প্রজণগণের পিতৃস্থান অধিকার করিয়াছিলেন । তাহাদের পিতামাতা কেবল তাহাদের জন্মহেতুমাত্র ছিল । রাজা কিরূপ প্রজাপালক হইবেন, এই বর্ণনায় তাহা বুঝা যায় । দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন সম্বন্ধে রাজার ব্যবহার কেমন ছিল, কবি কেমন সুন্দর উপমায় তাহ ব্যক্ত করিলেন, দেখুন,— “দ্বেন্থোপি সম্মতঃ শিষ্টস্তস্তার্তস্ত যথৌষধম । ত্যাজ্যো দুষ্টঃ প্রিয়োহপ্যাসীদজুলীবোরগক্ষতা।” ‘শিষ্ট ব্যক্তি শক্র হইলেও রোগীর ঔষধের ন্যায় তাহার নিকট সমাদর প্রাপ্ত হইত এবং দুষ্ট ব্যক্তি আত্মীয় হইলেও সর্পদষ্ট অঙ্গুলীর ন্যায় তাহার পরিত্যাজ্য ছিল। যেমন পিতা, তেমনই পুত্র। যেমন দিলীপ, তেমনই রঘু। কবি কেমন বুঝাইতেছেন,— “মন্দোৎকণ্ঠাঃ কৃতাস্তেন গুণাধিকতর গুরে । ফলেন সহকারস্য পুম্পোদগম ইব প্রজা।” ‘সুমধুর আম্রফল আস্বাদন করিয়া লোকে তাহার মুকুলের বিষয় ভুলিয়া যায়। অধিকতর গুণসম্পন্ন রঘুকে পাইয়। প্রজাগণ সেইরূপ দিলীপের অভাব ৰিশ্বত হইল।” আর একস্থলে