পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ф е се ভারতবর্ষ } বেলাভূমির ও সমুদ্রের সম্বন্ধ-বৰ্ণন-দৃষ্টে যেমন তাহী কবির প্রত্যক্ষ-দুষ্ট সামগ্ৰী বলিয়। প্রতীত হয়, হিমালয়ের বর্ণনায়ও সেই প্রত্যক্ষ-দর্শনের ভাব মনে আসে। কি স্বভাবসুন্দর মনোহর বর্ণনা ! কবির উপমায় একটা শ্লোকে হিমালয়ের অতুল বিভব উপলব্ধি করুন,— “অনস্তরত্নপ্রভাবস্য যস্য হিমং ন সৌভাগ্যবিলোপি জাতন্ম । একোহি দোষে গুণসন্নিপাতে নিমজ্জতীন্দোঃ কিরণেন্ধিবাঙ্কঃ ॥’ কবি বলিতেছেন,–“শৈতাধিক্য-নিবন্ধন হিমালয় সৌভাগ্যহীন নহেন ; কারণ, হিমালয় অনন্তরত্নের উৎপত্তি-স্থান । যেরূপ চন্দ্রের একমাত্র কলঙ্ক-দোষ তাহার স্নিগ্ধ কিরণরাশির মধ্যে বিলীন হইয়া থাকে ; সেইরূপ হিমাচলের অনন্ত সৌন্দর্য্যরাশির মধ্যে তাহার একমাত্র শৈত্যদোষ কখনই ধৰ্ত্তব্য নহে। হিমাচল যেমন রত্বের আকর, হিমাচলে যেমন অঙ্গরী, কিন্নরী, বিদ্যাধরীগণ আনন্দে বিচরণ করেন ; হিমাচল তেমনই সিংহ, ব্যাঘ্ৰ, গজ, চমরী প্রভৃতির লীলাভূমি। সেখানে যেমন পুষ্পিত উপবন, পত্নখচিত সরোবর, তেমনই ভীষণ মহারণ্য, ভয়াল গিরিগুহ । হিমাচল যেমন সাধু-সজ্জনের পুণ্য-নিকেতন, হিমাচল তেমনই ভয়-ত্রস্ত পাপীর আশ্রয়-স্থল। এই কঠোরে-কেমিলে বিষমে-মধুরে মিশ্রিত নগাধিরাজ,—কধির তুলিকায় একটা উপমায় কেমন চিত্রিত হইয়াছেন, দেখুন,— “দিবাকরান্দ্রক্ষতি যে গুহাসু লীনং দিবাভীতমিবন্ধকারম্ । ক্ষুড়ে ইপি নুনেং শরণং প্রপরে মমত্বমুচ্চৈঃশিরসাং সতীব ॥” অন্ধকার সূর্য্য-ভয়ে ভীত হইয়। নগাধিরাজের নিকট আশ্রয়প্রার্থী। কবি বলিতেছেন,— “যাহারা মহৎ, তাহার। সাধু-সজ্জনের প্রতি যেমন মমতাশীল, শরণাগত ব্যক্তি নীচজন হইলেও তাহার প্রতিও তাহার ভেমনই মমতা প্রকাশ করিয়া থাকেন । পেচক যেমন দিবাভাগে গুহা-মধ্যে আশ্রয় লয়, সূৰ্য্যভয়ভীত অন্ধকার সেইরূপ এই নগাধিরাজের আশ্রয়প্রার্থী হইয়া, গুহা-মধ্যে আশ্রয় প্রাপ্ত হয় । হিমাচলের বর্ণনার পর, কবি, পাৰ্ব্বতীর যৌবনোন্মেষ বৰ্ণনা করিয়াছেন। অনেক পুত্র-কন্যা সত্বেও গিরিরাজ উমার রূপে আসক্ত ছিলেন। যতই সে রূপ দেখিতেন, ততই দেখিবার ইচ্ছা হইত। কবির উপমায়,-—“অনস্তু পুষ্পস্য মধেহি চুতে দ্বিরেফমাল। সবিশেষসঙ্গ।” বসন্তকালে অশেষ পুষ্প প্রস্ফুটিত হইলেও ভ্রমর অস্ত্ৰ-মুকুলেই আসক্ত হয় । এবম্বিধ উপমায় পাৰ্ব্বভীর প্রতি গিরিরাজের নির্নিমেষ-দৃষ্টি খ্যাপন করিয়া, কবি, পাৰ্ব্বতীর যৌবনোন্মেষ-চিত্র অঙ্কিত কুরিয়াছেন । একে একে সকল অঙ্গের সৌন্দর্য্য-সুষমা প্রকাশ করিয়া, উপসংহারে বলিয়াছেন,— “সৰ্ব্বোপমাদ্রব্যসমুচ্চয়েন যথা প্রদেশং বিনিবেশিতেন। স। নিৰ্ম্মিত। বিশ্বস্বজা প্রযত্নাদেকস্থসৌন্দর্য্যাদদৃক্ষয়েব।" সমস্ত উপমা দিবার বস্তু একত্র করিলে কিরূপ সৌন্দর্য্য হয়, তাহ দেখিবার জন্যই বোধ হয় বিধাতা সমস্ত উপমা-বস্তু যথাযোগ্য স্থানে সন্নিবিষ্ট করিয়া পাৰ্ব্বতীকে স্বষ্টি করিয়াছিলেন। পাৰ্ব্বতীর চরণের নথকাস্তি এমন উজ্জ্বল রক্তবর্ণ ছিল যে, তিনি যখন ধরণীতলে পদবিন্যাস করিতেন, বোধ হইত, বেন অলক্তক-রসে ধরণী সিক্ত হইল, যেন ভূমিতলে স্থলপদ্ম প্রস্ফুটিত হইতে চলিল তাহার কণ্ঠস্বরের তুলনায় কোকিলের কণ্ঠস্বর