পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 >8 ভারতখৰ্ষ । কবিরিতাভিধাভবৎ। কবীতে তু ততো ব্যাসে কবয়স্তুয়ি শুিনি ॥” বাল্মীকির জন্মগ্রহণের পর 'কবি' এই একবচনাস্ত শব্দটির উৎপত্তি হয়। ইহার পর ব্যাস যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখন দুই জন কবির অভু্যদয়ে দ্বিবচনান্ত 'কবী' শব্দের উদ্ভব ঘটে। পরিশেষে দণ্ডীর আবির্ভাবে বহুবচনান্ত ‘কবয়ঃ’ শব্দ প্রযুক্ত হইয়াছে। এইরূপ আরও নানা শ্লোক আছে। শাঙ্গ ধর-পদ্ধতিতে দণ্ডীর প্রশংসা-বাদ সম্বন্ধে এইরূপ আর একটি উক্তি দৃষ্ট হয়। সেই উক্তি,— “ত্রয়োগ্নেয়ন্ত্রয়োবেদাস্ত্রয়োদেবাস্ত্রয়োগুণা: | ত্রয়ো দণ্ডি-প্রবন্ধাশ্চ ত্ৰিষু লোকেষু বিশ্রাতাঃ ” অগ্নিত্রয়, বেদত্ৰয়, দেবত্রয়, গুণত্রয় যেমন সৰ্ব্ববিদিত; দণ্ডীর রচনাও তদ্রুপ ত্রিলোকবিখ্যাত । আমরা পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, মৃচ্ছকটিকের এবং কাবাদর্শের শ্লোক-বিশেষের সাদৃগু দেখিয়া, কেহ কেহ দণ্ডীকে মৃচ্ছকটিক রচয়িতা বলিয়া ঘোষণা করিয়া গিয়াছেন। এদিকে আবার দণ্ডী-রচিত ‘ছন্দোবিচৗতি’ ও ‘কলাপরিচ্ছেদ’ নামক দুইখানি অলঙ্কার বিষয়ক গ্রন্থ পাওয়া যায়। মৃচ্ছকটিকের সহিত ‘দশকুমার’ রচয়িতার নাম-সংযোগের অন্ত যে সকল কারণ প্রদর্শিত হয়, তদপেক্ষ এক যুক্তিযুক্ত কারণ আমরা অনুধাবন করিতে পারি। দশকুমারচরিতে যেমন রাজনীতির কুট-কল্পন, মৃচ্ছকটিকে সেইরূপ সমাজ-নীতির কুট-কল্পনা। তাহাতে দণ্ডীর রচনা ন হইলেও, মৃচ্ছকটিকের সহিত দশকুমারচরিত-রচয়িতার সাক্ষাৎ সম্বন্ধ যে কিছু ছিল, তাঙ্গ বেশ বুঝা যায়। দণ্ডী এক এক সময় চাণক্যের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করিয়াছেন বলিয় তাহাকে কুটনীতির-অনুসরণকারী বলিয়া মনে হয়। দণ্ডীর রচনা-প্রণালী বিশুদ্ধ ; উপাখ্যানগুলি মৌলিক ন৷ হইলেও তাহার রচনা-নৈপুণ্য উহাকে অশেষ সৌন্দর্ঘ্যে সজ্জীভূতু করিয়া রাখিয়াছে। এখন যে দশকুমারচরিত প্রচলিত আছে, তাহার সকল অংশ দণ্ডাচার্য্যের রচিত বলিয়া প্রতিপন্ন হয় না । কথিত হয়, দশকুমারচরিতের প্রথম অংশ ও শেষাংশ লোপ পাইয়াছিল ; পরবৰ্ত্তিকালে অপর গ্রন্থকারগণ কর্তৃক তাহ সংযোজিত হইয়াছে। তাহা হইলেও দশকুমারচরিত সংস্কৃত-ভাষায় যে একখানি উৎকৃষ্ট গদ্য-কাব্য, তদ্বিষয়ে কোনই সংশয় নাই। দণ্ডী-প্রণীত কাব্যাদর্শ অলঙ্কার গ্রন্থ বটে ; কিন্তু উহার মধ্যেও র্তাহার কবিত্ব-প্রভা বিচ্ছুরিত দেখি। তাহাতে কেহ কেহ কাদম্বরীর কোনও কোনও অংশে দণ্ডাচার্য্যের অমুস্থতির বিষয় অকুমান করেন। একটি দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করিতেছি। কাব্যাদর্শে আছে,—“অরত্নালোক সংহাৰ্য্যমবাৰ্য্য স্বৰ্য্যরশ্মিভিঃ। দৃষ্টিরোধকরং যুনাং যৌবনপ্রভবং তমঃ ॥” কাদম্বরীতে এই ভাবেরই কথা ভাষান্তরে দৃষ্ট হয়। যথা—“কেবলং চ নিসর্গত এব অভাজুভেন্তম অরত্নালোকোচ্ছেদ্যম অপ্রদীপ প্রভাপনেয়ম অতি গহনং তমো যৌবনপ্রভবম্ ।” দুয়েরই ভাব এক বটে ; উভয়ত্রই যুবকগণের যৌবনকালীন তমের বিষয় উপমা দ্বারা বুঝান হইয়াছে বটে ; উভয়ত্রই স্বৰ্য্যকিরণে, রত্নালোকে বা প্রদীপ-শিখায় যৌবন-মুলভ প্রগাঢ় তম দূর হয় না বলিয়াই খ্যাপন করা হইয়াছে বটে ; কিন্তু তাহা হইলেও কেহ কাহারও যে অনুসরণ করিয়াছেন, তাহা মনে হয় না । একই ভাব-কুসুম যখন দূর-দূরান্তরে দেশ-দেশান্তরে স্বাধীনভাবে প্রস্ফুটিত হইতে দেখি, তখন একই দশের দুই জন প্রতিভাবান কবির মধ্যে ঐ ভাব আপনা-আপনিই সে সঞ্জাত হইবে, তাঙ্গাতে মার আশ্চৰ্য্য কি ? দণ্ডীর দশকুমারচরিতে সমসাময়িক নানচিত্র চিত্র প্রকটিত ।