পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৬৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের সাহিত্য-সম্পং । ৩২৭ নাটককারের আয়ত্ত রাখা প্রয়োজন ছিল এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীগণ কত বিভিন্ন ভাষার উচ্চারণে অভ্যন্ত ছিলেন। এ কৃতিত্ব-কৌশল অস্ত কোনও দেশের অন্ত কোনও ভাষার নাটকে পরিদৃষ্ট হয় না। সংস্কৃত-ভাষার অধিকাংশ নাটক প্রেম-ভালবাসা-মূলক। অনেক স্থলেই কোনও নৃপতি নায়ক এবং তাহার একাধিক সহধৰ্ম্মিণী সত্বেও তিনি কোনও এক সুন্দরী কুমারীর রূপে বিমুগ্ধ। প্রথম দর্শনেই নায়ক-নায়িকার প্রেম-সঞ্চার । নায়কের জন্ত ব্যাকুল হইলেও নায়িকা আপনার অনুরাগ অব্যক্ত রাখিয়া নায়ককে সংশয়ের যন্ত্রণায় অধীর করিয়া তুলেন। মিলনের পথে নানা অন্তরায় উপস্থিত হয় । তাহাতে বিলম্ব-জনিত হতাশে নায়ক-নায়িকা উভয়েই হাকুল হইয় পড়েন । নায়িকার একজন সহচরী এবং নায়কের একজন বিদুষক থাকেন। র্তাহাদের সহিত কথাবার্তায় যথাক্রমে উভয়ের প্রাণ কতকটা আশ্বস্ত হয় বটে ; কিন্তু মিলন পৰ্য্যন্ত বিষম উদ্বেগে প্রেমিক-প্রেমিক উভয়কেই উন্মাদ করিয়া তুলে । বিদুষক সৰ্ব্বত্রই ব্রাহ্মণ বটেন ; কিন্তু ব্রাহ্মণোচিত গাম্ভীৰ্য্যাদি গুণের পরিবর্তে র্তাহার অঙ্গভঙ্গী এবং বাচালতাই প্রকাশ পায় । বিশুদ্ধ হাস্য-রসের বিকাশের জন্যই প্রধানতঃ বিদুষকের অবতারণা। ভারতীয় নাট্য-সাহিত্যের সহিত গ্রীকভাষার নাটকাবলীর বহু সোসাদৃশু দৃষ্ট হয়। পুরাণাদি নাটকের ঘটনা গ্রহণ এবং নাটকের নায়ক ধীর উদাত্ত চরিত প্রভৃতি লক্ষণ গ্রীস-দেশের প্রাচীন নাটকেও পরিগৃহীত। ভবভূতি প্রণীত উত্তররামচরিত’ এবং মহাবীরচরিতের সহিত গ্ৰীসদেশের নাট্যকার এস্কাইলাসের আগামেম্নন্‌’, ‘ইউমেনাইডিস’ প্রভৃতির অনেক সাদৃশু আছে। উভয়ত্রই শোকের বিষম প্রবাহ প্রবাহমান। চরিত্র-সাদৃশুও আশ্চৰ্য্য নৈকট্যসম্পন্ন। এবম্বিধ সাদৃশু আবার ইংলণ্ডের নাট্য-সাহিত্যে অতিমাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। ইংলণ্ডের রাজী এলিজাবেথের সমসাময়িক সেক্সপিয়ার প্রমুখ প্রসিদ্ধ কবি-নাট্যকারগণের মধ্যে এ সাদৃশু অতি প্রবল। সেক্সপিয়ারের অনেক নাটকের অনেক চরিত্রে ও অনেক নাট্য-কৌশলে ভারতের নাট্য-চাতুৰ্য্যের সাদৃশু দেখিতে পাওয়া যায়। অভিনব চরিত্র-স্বষ্টিতে লক্ষ্য নাই, বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির চরিত্র প্রস্ফুটিত করাই লক্ষ্য ;–সেক্সপিয়ারের নাটকে এবং ভারতবর্ষের নাটকে এ সম্বন্ধে বিশেষ সাদৃশু আছে । কিবা সেক্সপিয়ারের নাটকে কিবা ভারতীয় নাট্যে সময়ের এবং স্থানের সমতা-রক্ষার প্রয়াস প্রায়ই দেখা যায় না । উভয়ত্রই কাল্পনিক এবং অনৈসর্গিক ঘটনার সমাবেশ আছে। উভয়বিধ রচনাতেই গদ্ধের ও পদ্যের সংমিশ্রণ দেখা যায়। উভয়বিধ নাটকেই গাম্ভীর্য্যের পাশ্বে চাপল্য,-হাস্য-বীভৎসাদি রসের সহিত বীর-করুণ রসাদির অবতারণা আছে এবং উভয়ের মধ্যেই শব্দ-চাতুৰ্য্যে হাস্তকর ও দ্ব্যর্থভাব প্রকাশ পাইয়াছে । সংস্কৃত নাট্য-সাহিত্যের বিদুষক, সেক্সপিয়ারের নাটকে 'ফুল' বা ভীড় রূপে প্রকটিত। নাটকে ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত প্রদর্শন জন্য উভয়ত্রই নানা কৌশল পরিগৃহীত। পত্র-লেখা, এক অভিনয়ের মধ্যে অষ্ঠ অভিনয়ের অবতারণা, মৃত ব্যক্তির পুনৰ্জ্জীবন-প্রাপ্তি, হাস্ত-রসের অবতারণার উদেখে উন্মত্ত-ভাব প্রকাশ প্রভৃতি সেই সকল কৌশলের অন্তর্নিবিষ্ট। এবম্বিধ সাদৃশ্বের বিষয় পৰ্য্যালোচনা করিয়া পণ্ডিতগণ বিস্ময়-বিমুগ্ধ হন। বিচ্ছিন্ন সম্বন্ধ দুই দূরদেশের নাট্যকারের মধ্যে রচনার এ অভিনব সাদৃশু কি প্রকারে