পাতা:পৃথিবীর ইতিহাস - চতুর্থ খণ্ড (দুর্গাদাস লাহিড়ী).pdf/৬৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের সাহিত্য-সম্পং । ৩৪৩ এক কালিদাসের পরিচয় পাই। মালবিকাগ্নিমিত্র সেই কালিদাসের রচনা বলিয়াই তাই কেহ কেহ অনুমান করেন। যাহা হউক, মালবিকাগ্নিমিত্রের বর্ণনীয় বিষয় কি, এক্ষণে দেখা যাউক । , মালবিক এবং অগ্নিমিত্রের প্রণয়-কাহিনীই মালবিকাগ্নিমিত্রের প্রাণভূত। অগ্নিমিত্র এবং তাহার পিতা পুষ্পমিত্ৰ—ইতিহাস-প্রসিদ্ধ। পুষ্পমিত্র-মৌর্য্য-রাজবংশের সেনাপতি ছিলেন । নৃপতিকে হত্যা করিয়া তিনি মগধে সুঙ্গ-রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। বিষ্ণুপুরাণে ভবিষ্যরাজবংশ-বর্ণন প্রসঙ্গে পুষ্পমিত্রকে এবং অগ্নিমিত্রকে মগধের অধিপতি, বলিয়া নির্দেশ করা হইয়াছে। কিন্তু নাটকে বিদিশার অধিপতি বলিয়৷ অগ্নিমিত্র পরিচিত হইয়াছেন। ঐতিহাসিক অগ্নিমিত্র এবং নাটকীয় অগ্নিমিত্র অভিন্ন ছিলেন বলিয়াই প্রতীত হয়। বিদিশায় এবং মগধে উভয়ত্র তাহার রাজধানী থাকা অসম্ভব নহে। অগ্নিমিত্রের বিদিশায় অবস্থিতি-কালে যে ঘটনা সংঘটিত হইয়াছিল, কবি তাছাই অবলম্বন করিয়া এই দৃশুকাব্য প্রণয়ন করিয়া গিয়াছেন, ইহাই মনে করা যাইতে পারে। মালবিকাগ্নিমিত্র-পাচ অঙ্কে বিভক্ত । অগ্নিমিত্রের প্রধান মহিষীর নাম—ধারিণী। মালবিকা—র্তাহার সহচারিণী। মালবিকা— রূপসী—নবযৌবন-সম্পন্ন । রাজ-অন্তঃপুরে অবস্থান-কালে নাট্যাচাৰ্য্য উপাখ্যান। গণদাসের নিকট মালবিক গীত-বাস্ক-নৃত্যে নৈপুণ্য লাভ করিয়াছিলেন। একে সুন্দরী, তাহাতে মৃত্য-গীতে সুনিপুণ ; রাস্ত্রী ধারিণী সেই জন্য মালবিকাকে রাজার দৃষ্টির অন্তরালে রাথিয়াছিলেন। একদিন হঠাৎ রাজ-চিত্রশালার একখানি চিত্রপটের প্রতি রাজার দৃষ্টি আকৃষ্ট হইল। সেই চিত্রপটে মালবিকার প্রতিকৃতি অঙ্কিত ছিল । রাস্ত্রী ধারিণীই সেই চিত্ৰপট অঙ্কিত করাইয়াছিলেন । চিত্রপট-দর্শনে রাজার চিত্ত চঞ্চল হইয়া উঠিল । রাজা মনে মনে ভাবিলেন,—যাহার চিত্ৰপট এত সুন্দর, না-জানি সে নিজে কি অপরূপ সৌন্দর্য্যশালিনী ! ঔৎসুক্য বাড়িল । রাজা মালবিকার স্বরূপ পরিচয়ের সন্ধান লইলেন । মালবিকার চাক্ষুস প্রত্যক্ষ লাভের জন্য রাজার ঐকান্তিক আগ্রহ জন্মিল। কিন্তু রাজ্ঞী ধারিণীর কৌশলক্রমে মালবিক রাজার দৃষ্টি বহিভূত রহিয়া গেলেন। ইতিমধ্যে গণদাস ও হরদত্ত নামক রাজকীয় সঙ্গীতাচাৰ্য্যদ্বয়ের মধ্যে বিরোধ উপস্থিত হইল। উভয়েই নৃপতির নিকট সেই বিরোধের মীমাংসা করাইতে গেলেন। অতঃপর রাজা ও রাণী উভয়ে উপস্থিত থাকিয় দুই নাট্যাচার্য্যের উপর এক নাট্যাভিনয়ের ভার অর্পণ করিলেন। সে নাটক—শশ্মিষ্ঠা-প্রণীত চতুষ্পদীযুক্ত ‘ছলিক’ নাটক। সে নাটকের অভিনয়প্রদর্শন দুঃসাধ্য। সুতরাং সেই নাটকের অভিনয়ে দুই জনের গুণপনার মীমাংসা হইবে, ইহাই ধাৰ্য্য হইল। যথানিৰ্দিষ্ট সময়ে নাট্যাচাৰ্য্যগণ অভিনয় আরম্ভ করিলেন । মনোহর মৃদঙ্গধবনিতে অভিনয়ের সমাচার বিঘোষিত হইল। নেপথ্যে মালবিক বাদিত্র-বাদনে ব্ৰতী ছিলেন। মধুবৰী মৃদঙ্গের ধ্বনি কোথা হইতে উখিত হইতেছে,—তাহ দেখিবার জন্ত রাজা উৎসুক হইলেন। তিনি জানিতে পারিয়াছিলেন, মালবিকাই মৃদঙ্গ বাজাইতেছিলেন। সুতরাং মালবিকাকে দেখিবার উপযুক্ত অবসর উপস্থিত বুঝিতে পারিয়া, রাজা সঙ্গীতশালায় প্রবেশোয়ুখ হন। রাজার ভাব-বিপর্যক্ষদর্শনে রাজী ধারিণী উদ্বিগ্ন হইলেন। রাজার ব্যস্ততার জন্ত বিদূষক রাজাকে অঙ্গুযোগ করিলেন। প্রকারাস্তরে রাজাকে বাধা দিবার চেষ্ট